প্রতিবছর ঈদে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রগুলো লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে জেলা শহরের অদূরে মেঘলা ও নীলাচলে। কিন্তু এবার এ দুই পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের তেমন ভিড় দেখা গেল না।
সংশ্লিষ্টরা বললেন, ঈদের আগে ও পরে গরম আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত পর্যটক তারা পাননি। তাছাড়া পর্যটকরা এখন শহরের চেয়ে উপজেলা পর্যায়ের নতুন পর্যটন স্থানগুলোতে বেশি যাচ্ছেন।
শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট কাউন্টারের কর্মী আদীপ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের পরদিন বুধবার ২ হাজার ৫০০টি টিকেট বিক্রি করেছেন তারা। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে এক হাজারের মত টিকেট।
“অথচ স্বাভাবিক সময়ে ঈদের চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত দিনে চার থেকে সাড়ে হাজার টিকেটও বিক্রি হয়েছে এখানে। এবার মানুষ ততটা আসেনি।”
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কাউন্টারের কর্মী সুকুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সেখানে বুধবার বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টিকেট, যেখানে আগে ঈদের সময় দিনে সাড়ে চার হাজার টিকেটও বিক্রি হত।
মেঘলা ও নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র দুটির অবস্থান তিন কিলোমিটারের মধ্যে হওয়ায় দুটোতেই টিকেট বিক্রির পরিমাণ কাছাকাছি থাকে বলে জানালেন তারা।
জেলা আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এক সময় বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসা ছিল শহরকেন্দ্রিক। এখন রুমা ও থানচিতে অনেকে বেড়াতে যান। ঈদের আগে এবার অতিরিক্ত গরম ছিল। তাছাড়া ঈদের সময় কালবৈশাখীও হয়েছে। এসব কারণে মনে হয় পর্যটক কমে গেছে।”
বুধ ও বৃহস্পতিবার নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল, ছুটি কাটাতে আসা মানুষ মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুবছর পর মুক্তভাবে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে আনন্দের শেষ নেই। পাহাড় ও প্রকৃতি দেখে ভালো লাগার অনুভূতির কথাও তারা বললেন।
নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে কথা হয় গাজীপুর থেকে আসা রওশান আরার সঙ্গে। তিনি বললেন, “দীর্ঘদিন করোনা মহামারীতে ঘরবন্দি ছিলাম। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর আবার সারাদিন অফিসের কাজ নিয়ে থাকতে হত। ঈদের ছুটিতে পাহাড়ে এসে যা দেখি, সবকিছুই তো ভাল লাগে।”
নীলাচল ঘুরে দেখার পর বান্দরবানের আরও কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছার কথা জানালেন তিনি।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রাজীব নামের একজন বললেন, “শহরের জীবন তো প্রচণ্ড ব্যস্ততার। ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। এখানে সবার সুন্দর ও চমৎকার সময় কাটছে।”
ঢাকা থেকে একসঙ্গে কয়েক পরিবার মিলে বেড়াতে এসেছেন একদল পর্যটক। শিশুরা দৌঁড়াঝাপ করে আর নীলাচলে বিভিন্ন পয়েন্টে ছবি তুলে উপভোগ করছেন সময়।
তাদের দলের একজন প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আমি এর আগেও নীলাচলে এসেছি। পাহাড়ে এত উঁচু জায়গায় যতবার আসি ততবারই মুগ্ধ হই। নীলাচলসহ অন্য যেসব পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোও অন্যরকম সুন্দর।”
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ঝুলন্ত সেতু ও কেবল কারে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। দল বেঁধে প্যাডেল বোটে করেও বেড়াচ্ছেন মেঘলা লেকের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।
বরিশাল থেকে আসা মো. আলমগীর বললেন, “দুই পরিবার মিলে আমরা মোট দশজন বেড়াতে এসেছি। এর আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে এসেছি। কিন্তু পাহাড়ে এসে তার থেকেও ভালো লেগেছে। আমি এর আগেও এখানে এসেছি। এবার মা-বাবাকে নিয়ে এলাম।”
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক পর্যটক দলের সদস্য ইকবাল মাহমুদ বললেন, সবকিছু মিলে ঈদের ছুটির সময়টা দারুণ উপভোগ করছেন তিনি।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন বললেন, “প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্টরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও থানচিতে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। এবার পর্যটকদের অত বেশি ভিড় না থাকলেও দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।”