বৃহস্পতিবার রাতে
উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন খানের মাছের
ঘেরে বাঘটিকে বসে থাকতে দেখা গেছে। পরে বন বিভাগকে খবর দেওয়া হয়।
শুক্রবার দুপুরে
বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. আব্দুস সবুর বলেন, “গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়েছে
এই সংবাদ পাওয়ার পর রাতেই বনকর্মী, কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার
রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) সেখানে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাঘ খোঁজা হচ্ছে।”
“ওই এলাকার সব মানুষকে
সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লোকালয়ে দেখা গেলে বাঘটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার
উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সুন্দরবনের কোল
ঘেঁষা ধানসাগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সুন্দরবনের ভোলা নদী। নদীর পাশে
খেজুরবাড়িয়াসহ আরও তিনটি গ্রাম রয়েছে। কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এসব গ্রামে। নদীটি
মরে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি একেবারেই কমে যায়। ফলে অবাধে হেঁটে বনের মধ্যে ঢুকে যাওয়া
যায়।
খেজুরবাড়িয়া গ্রাম
সুন্দরবন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে ধানসাগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য
মো. আবুল হোসেন খানের একটি মাছের ঘের রয়েছে। তার ছেলে মো. শাহিন খান রাত সাড়ে ৯টার
দিকে টর্চলাইট নিয়ে মাছের ঘের পাহারা দিতে যান। টর্চলাইটের আলো দূরে ফেললে ঘেরের আইলে
(মাটির বাঁধ) একটি বাঘকে বসে থাকতে দেখেন।
ইউপি সদস্য আবুল
হোসেন বলেন, “ভয় পেয়ে শাহীন চিৎকার শুরু করলে বাঘটি চলে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসী
রাতে দলবেঁধে পাহারা দেয়। পরে বন বিভাগের লোকজন আসে। তবে বাঘটি গ্রামের কোথাও লুকিয়ে
আছে নাকি বনে ফিরে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।“
ধানসাগর ইউনিয়নের
গ্রাম পুলিশের সদস্য মো. তোফাজ্জেল হাওলাদার বলেন, “গত এক মাস ধরে সুন্দরবন সংলগ্ন
রাজাপুর, দাসেরভারানি, খেজুরবাড়িয়া, টগরাবাড়ি গ্রামে মাঝে মাঝে বাঘ আসছে বলে আমরা গ্রামবাসীর
কাছ থেকে জানতে পারছি। তাই গ্রামের মানুষদের সতর্ক থাকতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।”
দক্ষিণ রাজাপুর
গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের বাড়িতে গত ৩১ মার্চ রাতে বাঘ ঢুকে পড়ে। পরে বাঘটি গোয়ালে
রাখা একটি মহিষের ওপর আক্রমণ করে।
সোবাহান বলেন, “পরে
আহত মহিষটি জবাই করে মাংস গ্রামবাসীকে বিলিয়ে দেই।”
বন অধিদপ্তরের খুলনা
বিভাগীয় কার্যালয়ের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ভোলা নদী দীর্ঘদিন খনন
না হওয়ায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা মরে গেছে। গ্রীষ্ম মৌসুম এলেই নদীতে পানি কমে যায়। ফলে
এই সময় সুন্দরবনে ঢোকা বা বেরনো সহজ।
“বৃহস্পতিবার রাতে
খেজুরবাড়িয়া গ্রামের একটি মাছের ঘেরে বাঘ দেখা গেছে। খবর পেয়ে বনকর্মীরা সেখানে যান।
আমরা সেখানে কোনও বাঘের সন্ধান পাইনি। গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কিত
না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
বন বিভাগ জানিয়েছে,
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষায় একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ২৩
মার্চ পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’
অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২৫ সালের
মার্চ মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এর আওতায় সুন্দরবনের ৬০ কিলোমিটার নদী ও খাল
খনন করা হবে। আগামী শুষ্ক মৌসুমের (নভেম্বর-ডিসেম্বর) আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা
সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া বনের পাশ
দিয়ে ৬০ কিলোমিটার এলাকায় লাইলনের দড়ি দিয়ে ঘেরাও করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে
আগামীতে বাঘ অবাধে লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না বলে মনে করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।