ক্যাটাগরি

দোকানে তেল আসেনি, এসেছে আশ্বাস

রোজার মাঝামাঝি সময় থেকেই খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে সারাদেশে সংকট তৈরি হতে থাকে। আর ঈদের আগে দোকানের তাকে সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি।

বাজার থেকে তেল ‘হাওয়া’ যাওয়ার মধ্যেই ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেরাই মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

মালিকদের ঘোষণায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে অন্তত ৩৮ টাকা বাড়িয়ে খুচরা মূল্য ১৯৮ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা এবং পাম তেল ১৭২ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে ঈদের ছুটির কারণে শুক্রবার পর্যন্ত মিলগুলো থেকে বর্ধিত মূল্যে তেল সরবরাহ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন মিল মালিক ও পাইকারি বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানে ড্রাম থেকে খোলা সয়াবিন তেল মাপার জন্য বোতলে ভরা হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এদিন কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আগের মতই মুদি দোকানগুলোতে সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। কিছু দোকানে খোলা সয়াবিন বিক্রি হতে দেখা গেলেও বোতলজাত তেল ছিল না।

কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানগুলোতে সয়াবিন তেলের পরিবর্তে দেখা গেছে সরিষার ও সূর্যমুখী তেলের বোতল। প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩৪০ টাকার মধ্যে।

এ বাজারের আলী স্টোরের বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঈদের পর কোনো কোম্পানির ডিলার তেল দিতে আসেনি। আগে ডিলাররা দোকানে দোকানে তেল দিয়ে যেতেন।

তবে শুক্রবার সকালে টিকে গ্রুপের পুষ্টি ব্র্যান্ডের ১০ বোতল তেল হাতে পেয়েছেন। দোকানে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেই তেল বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

“যেই তেল এসেছে তাতো আমার ও দোকানের কর্মচারীদের চাহিদা মেটাতেই শেষ হয়ে গেছে। তবে আমরা বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি যে, কাল থেকে কিছু তেল সরবরাহ হবে।”

খোলা সয়াবিন তেলের ড্রাম শেষ পর্যায়ে; কারওয়ান বাজারের এক মুদি দোকানি ড্রামের তেলের শেষটুকু বোতলে ভরছেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর সকাল থেকে ‍পুষ্টি ব্র্যান্ডের কিছু বোতলজাত তেল বিপণন শুরু করেছিল কারওয়ান বাজারের অন্যতম ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতা আঁখি স্টোর।

দোকানের একজন পরিচালক জানান, সরবরাহ না থাকার কারণে তারা পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের তেল দিতে পারছিলেন না। শুক্রবার পুষ্টির কিছু তেল পেয়ে তা বিতরণ করে দিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমাদের দোকান থেকে পাঁচ হাজার পিছ ভোজ্যতেলের কার্টুন বিক্রি হয়। সেখানে আজকে পুষ্টি কোম্পানি ২০০ কার্টুন দিয়েছে।

“তীর, বসুন্ধরা, ফ্রেশ, রূপচাঁদা কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো পণ্য দেওয়া হচ্ছে না। শুক্রবার পর্যন্ত কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দাম ৭৪০ টাকায় (৫ লিটার) তেল বিক্রি করেছি।”

এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু মিল মালিক জানিয়েছিলেন, সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করে আমদানি ও পরিশোধন ব্যয় মেটানো যাচ্ছিল না। তারপরই মিল মালিকরা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেন।

শুক্রবার সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “ঈদের ছুটির কারণে মাঝখানে তেল সরবরাহ বন্ধ ছিল। এখন নতুন মূল্য ঘোষণা হয়েছে। শনিবার থেকে আবার সরবরাহ শুরু করা হবে।”

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জানান, রোববার ব্যাংক খোলার পর টাকা জমা দিয়ে নতুন তেল সংগ্রহ করা যাবে।

তিনি বলেন, “এর আগ পর্যন্ত বর্তমানে যে সংকট চলছে তা পুরোপুরি কাটবে না। তবে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমার ধারণা।

“আমরা ঈদের পর দোকান খুলিনি। কারণ আমাদের হাতে কোনো তেল নেই। ঈদের আগেও আমাদের হাতে তেল ছিল না। বেচাকেনা করার সুযোগও ছিল না।

“এখন নতুন করে দাম ঠিক করা হয়েছে। তেল হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী বেচাকেনা হবে।”

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী হয়েছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমেছে এবং কমছে। আশা করি যেই দাম দেশের বাজারে ঘোষণা করা হয়েছে সেটাও কমে আসবে।”

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি মূল্যে তেল সরবরাহ করা বিপুল চন্দ্র মিস্ত্রি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের ১০/১২ দিন আগে একবার তেল কিনতে পেরেছিলাম।

“এরপর থেকে আর কোনো মিল থেকে তেল পাইনি। ঈদের তিন দিন আগে থেকেই আমার পক্ষ থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনও নতুন করে তেল কিনতে পারিনি।”

তেলের জন্য শনিবার বিভিন্ন মিলে খোঁজ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কালকে মিলগুলোতে খোঁজ নেব যে, তারা কী দামে কেমন তেল দিতে পারবে। কালকে সবগুলো মিলকেই নক দেব।”

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাম জোটের নিন্দা

ভোজ্যতেলের দাম এক লাফে এতটা বাড়ানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, “ঈদের আগে থেকেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। দোকানে কোনো তেল না পাওয়ার চিত্র দেখা যায়।”

ঈদের পর সংকট আরও তীব্র হয় উল্লেখ করে বলা হয়, “ভোক্তা স্বার্থ না দেখে বাণিজ্য সচিব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে এক লাফে বোতলজাত সয়াবিন তেল ৩৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ৪০ টাকা লিটার প্রতি বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।”

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তখন দাম কমায় না বলেও অভিযোগ করা হয়।

কোভিড মহামারীর দুই বছরে মানুষের আয় কমেছে উল্লেখ করে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি জানান নেতারা।

বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও ইউসিএলবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার এবং জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা শিশু, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হকের নাম রয়েছে।

আরও পড়ুন:


সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ল
 


কোথাও মিলছে না সয়াবিন তেল, হঠাৎ ‘উধাও’
 


খুচরায় সঙ্কটের মধ্যে ২ কোটি লিটার তেলভরতি জাহাজ বন্দরে
 


ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব ভারতে রান্নায়