সরকারের দেওয়া তথ্য ঠিক আছে দাবি করে তিনি বলেছেন, ডব্লিউএইচওর
প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া এবং নিজের অবস্থান জানাতে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেবে
সরকার।
তবে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, ডব্লিউএইচওর
মৃত্যুর হিসাব গণনার পদ্ধতি ঠিকই রয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা পরিসংখ্যান তৈরি
করেছে, তা উৎস জানতে হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীতে গত দুই বছরে বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে মৃত্যু ২৯
হাজার ১২৭ জন। প্রকৃত সংখ্যাটি এর ৫ গুণ বেশি বলে ডব্লিউএইচওর সর্বসাম্প্রতিক এক
প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
একটি দেশে বছরে গড়ে কত সংখ্যক মানুষ মারা যায়, সেই সংখ্যার অতিরিক্ত
সংখ্যাটা বের করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডব্লিউএইচও।
সরাসরি কোভিডে মৃত্যু বলে নিশ্চিত নয়, এমন কারণগুলোও বিবেচনায় নেওয়া
হয়েছে প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে। এমন কারণগুলোর মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে
না পারাও রয়েছে।
সেই হিসাবে বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি দাঁড়ায় ভারতে ৪৭
লাখ, যেখানে দেশটিতে সরকারি হিসাবে মৃত্যু সোয়া ৫ লাখ। এই প্রতিবেদনে মৃত্যুর
সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যায় ভারত।
ভারত সরকার অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিকর,
ভুল তথ্যে ভরা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ উল্লেখ করে উড়িয়ে
দিয়েছে।
বিশ্বে কোভিড মহামারীতে প্রকৃত মৃত্যু প্রায় দেড় কোটি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
‘বিজ্ঞান মিথ্যা বলে না, মোদী বলেন,’ ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদন প্রসঙ্গে রাহুলের কটাক্ষ
ভারতে কোভিডে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আদৌ জানা সম্ভব?
মহামারীতে মাকে হারিয়ে ছেলের কান্না। কোভিড-১৯ আক্রান্ত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমেনা বেগমকে তিন দিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২১ জুন তার মৃত্যু হয়।
ডব্লিউএইচওর এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মহামারী শুরুর বছর
২০২০ সাল শেষে অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছিল ৪৬ হাজার ৪১ জন মানুষের। আর ২০২১ সালের
ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জন।
এনিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনায় সরাসরি যে
মৃত্যু হয়েছে, তাতে আমাদের দেওয়া তথ্য ঠিক আছে।
“আর করোনাভাইরাসের কারণে চিকিৎসা অনেকে পায় নাই,
বা চিকিৎসা নেয় নাই, হাসপাতালে যায় নাই, সে কারণে যে মৃত্যু ঘটেছে, সেটা তো সরাসরি
করোনাভাইরাসের কারণে মারা গেছে, তা না। ননকমিউনিকেবল ডিজিজে মৃত্যু বাড়তে পারে।”
তবে এই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে স্বীকার করেন
তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, “ডব্লিউএইচওর
এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া আমরা দেব। এর এক্সপ্লানেশন আমাদের কাছ থেকে যেটা দেওয়া
দরকার, দেশবাসীর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য আমরা তা দেব।”
“কিন্তু এটুকু পরিষ্কার, করোনাভাইরাস আক্রান্ত
হয়ে মারা যাওয়ার যে ফিগার আমরা দেখিয়েছি, তা ঠিক আছে,” পুনর্বার
বলেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদন নিয়ে ডা. মুশতাক হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে পদ্ধতিতে মৃত্যুর এ সংখ্যা নির্ধারণ করা
হয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। তবে যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই ফলাফল
দিয়েছে, ওই তথ্যগুলো কোত্থেকে পেয়েছে সে বিষয়টিও পরিষ্কার করতে হবে।
মহামারী মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসা এই বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচ গুণ অতিরিক্ত মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে, তার এক ভাগ কোভিডে
মারা গেছে বলে মনে করেন তিনি।
“তাদের তথ্য থেকে আমি ধরে নিতে পারি, তার এক ভাগ
মানুষের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে। মৃত্যু হয়েছে কিন্তু পরীক্ষা করা হয়নি। বাকি
যে চার ভাগ নানা ধরনের অসুস্থতায় মারা গেছে।”
ডা. মুশতাক মনে করেন, মহামারীতে বাংলাদেশে ঠিক কত মানুষ মারা গেছে, তার
একটি সম্পূরক গবেষণা করা দরকার।
“সম্পূরক গবেষণা করে মৃত্যুর সংখ্যার বের করা
কোনো চ্যালেঞ্জিং বিষয় নয়। আমাদের দেশে মৃত্যু হলে কবর দিতে হয়, দাহ করতে হয়। এটা
সরকারের কাছে থাকে, লুকানোর কোনো বিষয় না। যদি এই মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে আমাদের
বের করতে হবে আনডিটেক্টেড করোনাভাইরাস কতজন, আর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মহামারীর
কারণে স্বাস্থ্য সেবা নিতে না পেরে কতজন মারা গেছে। জানা থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা
নিতে পারে।”
কোভিডে মৃত্যুর শীর্ষে আসলে কোন দেশ?