‘স্বাধীনতার খোঁজে’ নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোর (১৫) গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঘর ছেড়ে ভুয়া পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে রেস্তোরাঁয়
কাজ করত।
শনিবার র্যাব-৭ এর অধিনায়ক এম এ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, “১০ ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলার সময় মা-বাবা লেখাপড়ায় মনোযোগ না থাকা,
গেমস ও মোবাইল আসক্তি নিয়ে ওই কিশোরকে বকা দেয়। এতে রাগ করে সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।”
সেদিনিই নগরীর অলঙ্কার মোড় এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি নেয় বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় ওই কিশোর। সেখানে ১ মাস ২২ দিন চাকরি করার পর নগরীর চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় এলাকার আরেকটি রেস্তোরাঁয় সে চাকরি নেয়। পরে ১ ফেব্রুয়ারি নতুন চাকরি নেয় সেখানকার আরেকটি রেস্ট হাউজে।
এ পুরো সময়ে ওই কিশোর ভুয়া নাম ব্যবহার করে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা
এম এ ইউসুফ বলেন, “পরিবারের সাথেও কোনো যোগাযোগ করেনি। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, প্রাপ্তবয়স্কদের একটি গ্রুপের সাথে তার যোগাযোগ ছিল।
“এদের মধ্যে হান্নান নামের একজন পোল্যান্ড প্রবাসী ও জয় নামের একজন কাতার প্রবাসী আছে। দেশে ছুটি কাটাতে আসলে তারা অনলাইন ভিত্তিক গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে সক্রিয় হয়।”
অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে কিশোরটি মোবাইলে বিভিন্ন গ্রুপে জড়িত। অষ্টম শ্রেণিতে একবার ফেলও করেছে। তার মেলামেশা ৩৫-৪০ বছর বয়সীদের সাথে বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে।
“প্রবাসী দুজন ছুটি কাটিয়ে ফেরার আগের দিন ওই কিশোরের সাথে দেখাও করে। এই গ্রুপের সদস্যরা অ্যাডাল্ট ভিডিও শেয়ার করে এবং পর্নগ্রাফিতে আসক্ত। সে গোপনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক একাউন্ট চালাত ও বেনামি ৫-৬টি সিম ব্যবহার করত।”
মাহফুজুর রহমান বলেন,
“পড়াশোনা প্রায় ছেড়ে দিয়ে সে সারাদিন এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকত। বাবা-মা শাসন করলে সে ‘স্বাধীনতার খোঁজে’ বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। কেউ যেন হদিস না পায় এজন্য ব্যবহৃত মোবাইলটিও রেখে যায়।
“অথচ কিশোরটি আগে কখনো বাবা-মাকে ছাড়া বাইরে রাত কাটায়নি। পরিবারে অত্যন্ত আদরের একমাত্র সন্তান। পরিবারটি অবস্থাসম্পন্ন।”
সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় কিশোরটির মা গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নগরীর একটি থানায় জিডি করেন।
পরে চলতি বছরের ২৬ মার্চ হান্নান, লিও দাশ ও জয় নামের তিন জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এ একটি মামলা করেন।
সন্তানের খোঁজ না পেয়ে জিডি ও মামলার বিষয়টি জানিয়ে র্যাব-৭ কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করে ওই কিশোরের পরিবার। এরপর নজরদারির একপর্যায়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর নতুন চান্দগাঁও থানার মোড় থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।