ক্যাটাগরি

‘দেশটা কি টাকার চেয়ে বড় নয়?’ মুস্তাফিজের আইপিএল খেলা নিয়ে খালেদ মাহমুদ

সাদা ও লাল বলের ক্রিকেটে আলাদা চুক্তি শুরু হওয়ার পর এই দুই বছরে লাল বলের চুক্তিতে সই করেননি মুস্তাফিজ। লাল বলে তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় আর চোট প্রবণ শরীরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে টেস্টে তাকে বিবেচনা করা হয়েছে কম সময়ই। তার নিজের অনাগ্রহের ব্যাপারটি তো স্পষ্ট চুক্তি থেকেই। গত আড়াই বছরে স্রেফ দুটি টেস্ট খেলেছেন তিনি।

তবে এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে দেশের কয়েকজন পেসারের চোট-অসুস্থতার কারণে আবার ঘুরেফিরে আসছে মুস্তাফিজের নাম। ঈদের আগে তার টেস্ট খেলার বাস্তবতা নিয়ে বেশ তোলপাড় চলে কয়েকদিন। ঈদের পরও উঠে এলো সেই প্রসঙ্গ।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে খালেদ মাহমুদ বললেন, টেস্টের বিবেচনায় মুস্তাফিজকে রাখা গেলে দলের পেস আক্রমণ সমৃদ্ধ হবে।

“আমি তো চাই মুস্তাফিজ টেস্ট খেলুক। কেন না? আমাদের তো এত বোলার নেই। হাতে গুনলে ইবাদত, তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, রাহি (আবু জায়েদ)… এরপর বোলার কই? বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলারই তো মুস্তাফিজ। আমাদের মূল বোলারদের একজন তাসকিন ইনজুরড, খেলতে পারবে না। শরিফুলও যে কোনো সময় ইনজুরিতে পড়তে পারে। মুস্তাফিজ থাকলে আমরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে পারতাম, দলের ভারসাম্য ঠিক থাকত।”

“এখন এত খেলা, তিন ফরম্যাটে খেলা কঠিন। এখানে সবাইকে বিশ্রাম দিতে হবে। তাসকিনের যেমন বিরতি দরকার, শরিফুলেরও বিরতি দরকার। মুস্তাফিজকে এখানে সাহায্য করার জন্য হলেও রাখা উচিত। বোলার যখন তৈরি হয়ে যাবে, তখন হয়তো মুস্তাফিজকে প্রয়োজন হবে না। সাদা বলে মুস্তাফিজ ভয়ঙ্কর। কিন্তু এটাও জানি, লাল বলেও সে প্রতিপক্ষের কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।”

কোন ক্রিকেটার কোন কোন সংস্করণে খেলতে ইচ্ছুক বা ইচ্ছুক নন, এটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা বোর্ড থেকেই তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। চুক্তিপত্র করা হয়েছে সেভাবে। তবে খালেদ মাহমুদের দাবি, সেই স্বাধীনতা কেবল সিনিয়র ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

“পাপন ভাই বলেছিলেন খেলোয়াড়রা যে ফরম্যাট খেলতে চায়, এ নিয়ে আলাপ করতে পারে। সেটা সিনিয়রদের ক্ষেত্রে বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে নয়। এখন যদি জয় (মাহমুদুল হাসান) বলে, ‘আমি ওয়ানডে খেলব, টেস্ট খেলব না’, এটা কি ঠিক হবে? মুস্তাফিজের বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? ও তো সাকিব না, তামিম না, মাশরাফি বা মুশফিক না, যারা এত বছর ধরে বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে সার্ভিস দিয়েছে।”

“মুস্তাফিজ কেন খেলতে চায় না, আমি জানি না। এটা বোর্ডই নির্ধারণ করবে, কাকে কোথায় খেলতে হবে। আপনি কি অফিসে বলতে পারেন- ‘আমি এই কাজ করব না, ওই কাজ করব?’ আপনি এখানে কর্মী, আপনি কীভাবে বেছে নেবেন? সভাপতি (বেছে নেওয়ার কথা) বলেছিলেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যাপারে।”

খালেদ মাহমুদের বার্তা শুধু ২৬ বছর বয়সী মুস্তাফিজ নয়, এই বয়সী দলের অন্য সবার প্রতিও। এই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এখনই পছন্দের সংস্করণ বেছে নেওয়া বা নিজের ইচ্ছায় খেলা, না খেলার ব্যাপার থাকা উচিত নয় বলেই মনে করেন টিম ডিরেক্টর।

“সাকিব-তামিমদের বয়স ৩৪-৩৫। তাদের এখন বিরতি প্রয়োজন। কিন্তু লিটন দাস তো বিশ্রামের উপযুক্ত নয়। লিটন যদি সাকিব-তামিম হতো, বলতাম সেও বিশ্রাম পেতে পারে। মুস্তাফিজের অবশ্যই টেস্ট খেলা উচিত, এখন তার পিক টাইম। আমরা তো বলছি না সব টেস্ট খেলতে। আমি চাই, ৬ থেকে ৮টি টেস্ট ম্যাচ বছরে তার খেলা উচিৎ।”

“একসময় শুনেছিলাম বায়ো বাবলের কারণে মুস্তাফিজ খেলতে চায় না। তবে আমার মনে হয় না এগুলো কোনো অজুহাত হতে পারে। তাসকিন, শরিফুলরা খেলতে পারলে তারও খেলা উচিত।”

তাসকিন-শরিফুলের মতো মুস্তাফিজের শরীরও বেশ চোটপ্রবণ। চোটের কারণে লম্বা সময় বাইরে থাকা, কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর বোলিংয়ের ধার হারানো, গতি কমে যাওয়া, এরকম নানা অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে এই পেসারকে। তার টেস্ট না খেলা বা তাকে টেস্টে বিবেচনা না করা, এসব তার ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’-এর অংশ বলেই মনে করা হয়। টেস্টের বাইরে গত ৫ বছরে স্রেফ ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাকে পাওয়া গেছে।

তবে টেস্টের চেয়ে আইপিএলের ওয়ার্কলোড কম বলে মনে করেন না খালেদ মাহমুদ।

“আইপিএলে কয়টা ম্যাচ খেলেন? ৬টা ধরলাম। খালেদ, এবাদত, তাসকিন, শরিফুল দুই টেস্টের চার ইনিংসে হয়ত ৬০ ওভার করে বল করে। ওয়ার্কলোড তো একই হচ্ছে! আপনি কোথায় বেশি ওয়ার্কলোড নিচ্ছেন? আপনি তো আইপিএলই বেশি খেলেন, আর তো কিছু বেশি খেলেন না। যুক্তির কথায় যদি আসি, ওয়ার্কলোড কোথায় বেশি আসে?”

“আপনি আইপিএল খেলতে যাবেন, যেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। আপনি বিসিবির অধীনে খেলেন, দেশের খেলায় মনোযোগ দিতে হবে। আমি মনে করি মুস্তাফিজ বুঝবে। ওকে আমাদের দরকার। এ মুহূর্তে ওকে খুবই প্রয়োজন।”

ওয়ার্কলোড কমানো বা চোটপ্রবণতা নয়, বরং টাকার হাতছানিতেই মুস্তাফিজ আইপিএল খেলতে মুখিয়ে থাকেন কিনা, এমন সংশয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গেল খালেদ মাহমুদের কথায়।

“সাদা বলে হয়তো টাকার ব্যাপারটা বেশি। আইপিএল খেললে হয়তো ২-৪ কোটি টাকা পাব। কিন্তু ক্রিকেট কি টাকার চেয়ে বড় নয়? দেশটা টাকার চেয়েও কি বড় নয়? আমরা তো টাকার জন্য খেলিনি! (আগের যুগের) একজন ক্রিকেটারের এখন মৃত্যুর সময় বিসিবির সহায়তা লাগে। ওদের (মুস্তাফিজদের) তো লাগবে না। ওরা বরং অন্যদের সহায়তা করতে পারে। দেশের জন্য কেন আমি খেলব না?”

আইপিএলে এবার দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ওভারপ্রতি ৭.৬২ রান দিয়ে ৮ উইকেট নেওয়ার পর সবশেষ ম্যাচে একাদশে জায়গা হারান মুস্তাফিজ। তাকে অবশ্য এখনই এনে টেস্ট খেলাতে বলছেন না খালেদ মাহমুদ। তবে জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মুস্তাফিজকে লাল বল হাতে ছুটতে দেখতে চান তিনি।

“যেহেতু ওকে আমরা ছুটি দিয়ে দিয়েছি, আইপিএল খেলছে, এখন ওকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। আইপিএল খেলুক। আইপিএলে আমাদের একজন প্রতিনিধিত্ব করছে, এটা আমাদের জন্য বড় একটা ব্যাপার। তবে আমরা চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটা টেস্ট হলেও খেলুক।”