গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু কারণে রাশিয়াকে শাস্তি দিতে পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ঠ রুশ ধনকুবের, রাজনীতিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গত মাসে পুতিনের দুই মেয়ে মারিয়া ভোরোনৎসোভা (৩৬) এবং ক্যাটেরিনা তিখোনোভার (৩৫) উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তারা পুতিনের সাবেক স্ত্রী লুডমিলার ঘরের সন্তান।
এখন কাবায়েভার উপর নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
কাবায়েভা সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতেন। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন। তাকে সুইজ্যারল্যান্ড থেকে বের করে দিতে গত মার্চ মাসে অনলাইনে একটি পিটিশন ফাইল করা হয়েছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে পুতিন ঘনিষ্ঠ যেসব ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে সেই তালিকায় কাবায়েভার নাম আছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে।
যদিও খসড়া ওই তালিকায় কাবায়েভার সঙ্গী হিসেবে পুতিনের নাম লেখা নেই এবং ইইউ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ওই তালিকায় সই করেনি।
নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেছেন পুতিন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি সাধারণত দেন না। তবে তিনি কাবায়েভার সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
২০০৮ সালে মস্কোর একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল, পুতিন তার স্ত্রী লুডমিলার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কাবায়েভাকে বিয়ের পরিকল্পনা করছেন।
লুডমিলা এবং কাবায়েভা উভয়ই তখন ওই খবর ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং তার পরপরই রুশ কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়।
ঠিক পাঁচ বছর পর পুতিন ও লুডমিলা তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
তখনও কাবায়েভাকে নিজে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল এবং যথারীতি পুতিন কাবায়েভার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
কাবায়েভার জন্ম ১৯৮৩ সালে। চার বছর বয়সে তিনি রিদমিক জিমন্যাস্টিকস শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৯৮ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন।
২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে তিনি ব্রোঞ্জ জেতেন। চার বছর পর এথেন্স অলিম্পিকে সোনা জেতেন তিনি।
কাবায়েভা যখন অবসরে যান তখন তার ঘরে ১৮টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক, ২৫টি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পদক এবং অলিম্পিক পদক শোভা পাচ্ছিল।
রাশিয়ার অন্যান্য অ্যাথলেটদের মত তিনিও ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছিলেন এবং ২০০১ সালে একটি ইভেন্টে পদক খোয়ান।
খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর কাবায়েভা রাজনীতিতে আসেন এবং ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের একজন সদস্য ছিলেন।
২০১৪ সালে কাবায়েভা ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের প্রধানের দায়িত্ব পান। রাশিয়ার সব বড় বড় মিডিয়া আউটলেটের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক এই ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপ। ওই সব আউটলেট থেকেই ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে।
পদের কারণে প্রচুর সম্পদের মালিক হন কাবায়েভা। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী বছরে তার আয় প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পুতিনের সঙ্গে কাবায়েভার কবে প্রথম দেখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি। তবে অলিম্পিকে সোনা জয়ী একজন অ্যাথলেট দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।
গুঞ্জন আছে, পুতিন ও কাবায়েভার সন্তানও আছে। তবে তাদের কয়টি সন্তান আছে তা নিয়ে নানা সময়ে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
সুইজারল্যান্ডের একটি পত্রিকার দাবি, কাবয়েভা ২০১৫ সালে লেক লুগানোর কাছে একটি ক্লিনিকে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। একই ক্লিনিকে ২০১৯ সালে তার আরেকটি ছেলে হয়।
এদিকে, সানডে টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে মস্কোয় যমজ সন্তানের জন্ম দেন কাবায়েভা।
ক্রেমলিন থেকে এসব খবর অস্বীকার করা হয়েছে।
২০১৫ সালে পুতিনের মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘‘একটি শিশুর জন্ম হয়েছে, যার পিতা পুতিন বলে দাবি করা হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
পুতিন জনসম্মুখে কখনোই তার সন্তানদের নাম উচ্চারণ করেন না। লুডমিলার সঙ্গে তার যে দুজন মেয়ে রয়েছে তাদের নাম না বলে তিনি বলেন, তার ‘প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মেয়ে রয়েছে’।
পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কাবায়েভা মাঝে মধ্যেই খবরের শিরোনাম হয়েছেন। আবার কখনো একেবারে আড়ালে থেকেছেন।
সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে মস্কোয় জুনিয়র জিমন্যাস্টিকস উৎসবে তাকে দেখা যায়। সেখানে তিনি ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার পক্ষে কথা বলেন।
কয়েকটি গণমাধ্যম জানায়, তার হাতে ওই সময় ‘ওয়েডিং ব্যান্ড’ ছিল।
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কাবায়েভার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি করা হচ্ছে।