সাময়িক
বরখাস্ত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম জানান, রোববার সকালে পাকশী
বিভাগীয় দপ্তরে তাকে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। তিনি যথাসময়ে উপস্থিত
হয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন।
রেলমন্ত্রী
নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারীদের জরিমানা করার পর
বৃহস্পতিবার ‘অশোভন আচরণের’ অভিযোগে শফিকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনা
তদন্তে শুক্রবার রাতে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল
ইসলাম বাবুকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা
বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করে তিন সদস্যের
কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বরাখাস্ত
টিটিই শফিকুল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য দেবেন বলে জানান।
শনিবার
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি কারও সাথে খারাপ বা অশোভন আচরণ করিনি।
আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত
রয়েছি। সেদিন যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলব। বাকিটা স্যারেরা শুনে যে ব্যবস্থা নেওয়ার নিবেন।”
ওই যাত্রীরা
নিজেদের রেলমন্ত্রী সুজনের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে মন্ত্রী শনিবার যাত্রীদের আত্মীয়
নন দাবি করে বলেছেন, বরখাস্তের বিষয়েও তিনি অবহিত ছিলেন না।
ওই দিনের
ঘটনার বিষয়ে শফিকুলের ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন
এক্সেপ্রেসে প্রান্ত, ওমর ও হাসান নামের তিন যাত্রী বিনা টিকেটে ট্রেনে ওঠেন। তিনি
[কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম] শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে বসা ওই যাত্রীদের টিকিট দেখতে
চাইলে তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। তখন পাকশী বিভাগীয় রেলের ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের
টিকিট করে দেন।
টিটিই বরখাস্ত নিয়েও কিছু জানতাম না: রেলমন্ত্রী
শফিকুল
বলেন, এতে ওই যাত্রীরা তাৎক্ষণিক কোনো অভিযোগ না করলেও ট্রেনটি ঢাকা স্টেশনে পৌঁছার
আগে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন ফোনে তাকে বরখাস্তের
কথা জানান।
এ ব্যাপারে
ডিসিও নাসির বলেন, “আমাদের কন্ট্রোল অফিস থেকে একটি অফিস অর্ডার এলে টিটিইকে সাময়িক
বরখাস্ত করা হয়।
“এই ঘটনা
তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শফিকুলকে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির
থাকতে বলা হয়েছে।”
এদিকে,
ট্রেনটি ঢাকা পৌঁছার আগেই শফিকুলকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জানানো হলেও পরে ওই তিন যাত্রীর
একজন মো. ইমরুল কায়েস (প্রান্ত) ঢাকায় অভিযোগ করেন রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর।
এক্ষেত্রে
শফিকুল আগে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পেয়েছেন নাকি আগে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা
হয়েছে তা ঠিকঠাক সময়মত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অভিযোগে
ইমরুল লিখেছেন, তারা টিকিট না পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে উঠে
পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর টিটিই শফিকুল তাদের কাছে টিকিট চেয়ে না পেয়ে তাদের কাছ থেকে ১৫০০
টাকা নেন। তখন তারা ১৫০০ টাকার টিকিট চাইলে শফিকুল তাদের ট্রেন থেকে ‘লাথি দিয়ে’ ফেলে
দেওয়ার হুমকি দেন।
এদিকে টিটিই
শফিকুলকে বরখাস্তের ঘটনায় শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ঈশ্বরদী
রেল শ্রমিক লীগের নেতা এসএম আহসান উদ্দিন বলেন, “যে কারও বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আসল;
অভিযোগকারী তো মিথ্যাও বলতে পারে। বিভাগীয় তদন্ত করে না দেখেই, খোঁজখবর না নিয়েই তাকে
সাময়িক বরখাস্ত করা হল। এটা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে বলে আমার বোধগম্য নয়।”