এ জেলায় ‘হানিকুইন’, ‘জায়েন্ট কিউ’ আর ‘জলডুপি’ জাতের আনারসের চাষ হয়।
এসব আনারসের পাতার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ এ ক্ষেত্রের অন্যান্য গবেষকরা।
একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে জাপান থেকে আসা একটি পরিদর্শক দল জেলার কমলগঞ্জ,
কুলাউড়া ও বড়লেখার বিভিন্ন আনারস বাগান পরিদর্শন করে। ওই দলের সদস্যরাও উন্নত আঁশ
ও সুতা তৈরির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে এখানকার আনারস পাতা থেকে আঁশ ও সুতা তৈরি করা গেলে তা
বিদেশে রপ্তানিরও বিপুল সম্ভবানা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি কারখানায় ‘ক্যালেন্ডার’ প্রজাতির
আনারসের পাতা থকে ফাইবার তৈরির কাজ চলছে এবং তা ‘বিদেশে রপ্তানি’ হচ্ছে বলে কৃষি
বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল
বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা
ধরে এবছর জেলার ১ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে।
২০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরে এ বছর জেলায় ১ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে
জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলা আনারস চাষের জন্য
প্রসিদ্ধ। এই ফলের চাষাবাদে জেলার পাঁচশ কৃষক সম্পৃক্ত আছেন বলেও অধিদপ্তরের এই
কর্মকর্তা জানান।
আনারস পাতা থেকে সুতা তৈরির গবেষণায় যুক্ত রয়েছে ‘এগ্রো ভিশন লিমিটেড’
নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। কৃষিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার জেলায় আনারস
পাতা থেকে আঁশ এবং তা থেকে সুতার তৈরির উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।
এগ্রো ভিশন লিমিটিডের চেয়ারম্যান রাজীব দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, আনারস কাটার পর ওই গাছে আর নতুন করে ফল আসে না। ওই গাছে অধিকাংশ পাতা
কেটে ফেলতে হয়। একবার আনারস ধরার পর কেটে ফেলা ডগা বা পাতা থেকে সুতা তৈরি হবে।
“এ জেলায় উৎপাদিত ‘হানিকুইন’, ‘জায়েন্ট কিউ’ আর ‘জলডুপি’ জাতের
আনারসের পাতার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে উন্নমানের আঁশ ও সুতা তৈরি সম্ভব বলে গবেষকরা
জানিয়েছেন।”
পরিত্যক্ত আনারস পাতা থেকে আঁশ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা এগ্রো ভিশন লিমিটেড
এগ্রো ভিশন কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে বিষয়টি পরীক্ষার জন্য জাপান থেকে
একটি পরিদর্শক দল কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখার বাগান পরিদর্শন করেছে বলে তিনি
জানান।
রাজীব জানান, ওই দলের প্রধান ওয়াদা সুহি আনারসের বাগান পরিদর্শন করে
বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তিনি
এই এলাকার আনারস বাগানকে ঘিরে সুতা তৈরির কারখানা করা সম্ভব বলে মতামত দেন।
“ওয়াদা সুহি মাঠে আনারস বাগান দেখেই নিশ্চিত করেন এটি দিয়ে সাধারণ
নয় উন্নতমানের সুতা তৈরি হবে।”
রাজীব জানান, শ্রীমঙ্গলের আনারস উৎপাদনকারী কাজী সামছুল হক ও জলিল
খানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি আনারসের পাতা সংগ্রহ করে তারা গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান।
ওয়াদা সুহি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে আনারসের ওই পাতাগুলো পরীক্ষা করে ‘ভালো
ফাইবার’ (আঁশ) পাওয়া গেছে।
‘হানিকুইন’, ‘জায়েন্ট কিউ’ আর ‘জলডুপি’ জাতের আনারসের পাতার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে উন্নমানের আঁশ ও সুতা তৈরি সম্ভব বলে জানা গেছে
ওয়াদা সুহি বলেন, “আনারসের সুতা খুবই মোলায়েম; এর থেকে তৈরি
কাপড়ও আরামদায়ক হবে। এখন পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা পর ওই এলাকার আনারসের পাতাকে কেন্দ্র
করে সুতা তৈরির কারখানা গড়ে উঠতে পারে।”
আনারস চাষি জলিল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাগান
পরিদর্শনের সময় জাপানি পরামর্শক আনারসের ডগা ভেঙে এর আঁশ বের করে সবাইকে দেখিয়ে
বলেছেন, ‘এর থেকে সুতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল’।”
একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টি পাতা হয় জানিয়ে আনারস ও লেবু চাষি কাজী
সামছুল হক জানান, আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫/২০টা পাতা কেটে ফেলা হয়। এই
পাতাগুলো মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়। কেউ কেউ গবাদি পশুর জন্য পাতাগুলো নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি বছরের মার্চে কৃষি বিপণন কেন্দ্রও আনারস পাতা
পরীক্ষা করে সুতা তৈরি করা যাবে বলে জানিয়েছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি কারখানায় ‘ক্যালেন্ডার’ প্রজাতির আনারসের পাতা থকে আঁশ তৈরির কাজ চলছে
“কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ
শ্রীমঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য
উপযুক্ত বলে জানান।”
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি কারখানায় ‘ক্যালেন্ডার’ প্রজাতির
আনারসের পাতা থকে ফাইবার তৈরির কাজ চলছে এবং সেগুলো নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করা
হচ্ছে বলে জানান কৃষিবিদ রাজু।
টাঙ্গাইলের ফ্যাক্টরিতে শ্রীমঙ্গলের পাতা থেকেও ভালো ফাইভার তৈরি
হয়েছে বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজারের পাতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ থেকে উৎপাদিত সুতার মান
অন্যান্য সুতার চেয়ে তুলনামূলক অনেক ভালো। যদি পুরোপুরি প্রসেস বাংলাদেশে করা যায়
তাহলে এ থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব পাবে। এ ছাড়া এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও আগ্রহ
নিয়ে আনারসের সুতায় তৈরি পোশাক কেনাকাটা করবেন।
এদিকে, এই এলাকায় সুতা তৈরির কারখানা গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহ
প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা এগ্রো ভিশন লিমিটেড।
জাপান থেকে আসা পরিদর্শক দলের প্রধান ওয়াদা সুহি
এ বিষয়ে নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, শ্রীমঙ্গলে সুতা তৈরির কারখানা করলে
এগ্রো ভিশনকে জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল
বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি এখানে এগ্রো ভিশন বা অন্য কেউ
আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেয় তাহলে এই কৃষকরা অতিরিক্ত কিছু আয়ের
সুযোগ পাবেন এবং এতে উৎসাহিত হয়ে এ এলাকায় আনারসের চাষাবাদও বাড়বে।”