ঈদের পর ফের আন্দোলনে ফিরে রোববার মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করে এই হুমকি দেন শ্রমিকরা; দাবি-দাওয়া মানতে খনি কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
শ্রমিকরা জানান, এখন থেকে প্রতিদিনই খনির গেইটে বিক্ষোভ সমাবেশ চলবে। এর আগে ঈদের জন্য শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক হাজার ১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের বিপরীতে কাজ করেন ২০০ চীনা শ্রমিক। খনিটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হলেও, কয়লা উত্তোলন কাজে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি/সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সরকার চুক্তিবদ্ধ।
কোভিড মহমারীর সময়ে খনির এক হাজার ১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪০০ জন শ্রমিককে খনির ভেতরে থেকে কাজ করার শর্তে ফেরত নেয়।
বাকি ৭৪৭ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা না হলেও বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না তাদের। এবার সাড়ে ৪০০ শ্রমিককেও চলতি মাসের ২ তারিখে খনি থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বড়পুকুরিয়া কয়লা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, “সব শ্রমিককে কাজে যোগদান করাতে হবে এবং বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে।”
২ এপ্রিল খনি থেকে বাইরে আসা শ্রমিক রিয়াজুল ইসলাম, আব্দুর রহিম ও জাহিদুলসহ অন্যান্য শ্রমিকদের অভিযোগ চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রতি ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে।
আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে এবং এক ধরনের বন্দি জীবনযাপন তাদেরকে করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।
‘অমানবিক’ আচরণের কিছু উদাহরণ তুলে ধরে আব্দুর রহিম বলেন, “ভুলক্রমে মাস্ক খুললে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, বাথরুম যেতে অনুমতি নিতে হতো। মাসে একবার বেতনের টাকা দেওয়ার সময়ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দিলেও তা দুই মিনিটের জন্য।”
বকেয়া বেতন ও কাজে যোগদানের দাবিতে মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা
করোনার কারণে কাজে যোগদানের পরিবেশ এখনও ফিরে আসেনি দাবি করে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামমান খান বলেন, “শ্রমিকদের চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ম প্রটোকল মেনে কাজে আসতে হবে।”
এর আগে ২৯ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামমান খান জানিয়েছিলেন, কূপে কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় খনিতে উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কূপ থেকে উত্তোলন শুরু হতে দুই থেকে আড়াই মাস লাগতে পারে।
দেশে বর্তমানে পাঁচটি কয়লা খনি থাকলেও একমাত্র বড়পুকুরিয়া খনির মধ্য ও দক্ষিণ অংশ থেকেই কয়লা উত্তোলন করা হয়। ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে ২০০৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখানে কয়লা তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) ১৯৮৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সন্ধান পায়। এই খনিতে ভূপৃষ্ঠের ১১৮ মিটার থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় পাঁচ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়লা রয়েছে। এখানে কয়লা ব্যবহারের জন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। যদিও এখানকার উৎপাদিত সব কয়লা সেখানে ব্যবহার হয় না।
খনির প্রকৌশলীরা জানান, এখানকার কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উৎকৃষ্ট মানের। এই কয়লায় সালফার কম।
আরও পড়ুন:
বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ
বকেয়া বেতন ও কাজে যোগদানের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লা শ্রমিকদের বিক্ষোভ