মূলত মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট না খেলার সূত্র ধরেই গত কিছুদিন ধরে এই বিতর্ক চলছে দেশের ক্রিকেটে। এই বাঁহাতি পেসার গত আড়াই বছরে খেলেছেন স্রেফ দুটি টেস্ট। লাল বলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেই তিনি সই করেননি গত দুই বছরে। টেস্টে তার প্রয়োজনীয়তার কথাও আগে খুব একটা আলোচিক হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন পেসারের চোট-অসুস্থতার কারণে মুস্তাফিজের টেস্ট না খেলার প্রসঙ্গ নিয়ে চলছে টানাটানি।
ঈদের ছুটিতে সেই বিতর্কের স্রোতে ভাটার টান এলেও আবার জোয়ার বইয়ে দেন খালেদ মাহমুদ। বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, টেস্টে মুস্তাফিজকে খুবই প্রয়োজন দলের। দেশ বড় না আইপিএলের টাকা, এই প্রশ্নও তোলেন দেশের সাবেক এই অধিনায়ক।
বোর্ড সভাপতি অবশ্য এই প্রশ্ন তোলা বা এই বিতর্কের প্রয়োজনই দেখছেন না। ঢাকার একটি হোটেলে রোববার টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নাজমুল হাসান মনে করিয়ে দিলেন এই সময়ের ক্রিকেটীয় বাস্তবতা।
“টি-টিয়োন্টি আসার পর অনেক কিছু বদলে গেছে, ক্রিকেটে একটা বিরাট পরিবর্তন আসছে। আপনি যদি টি-টোয়েন্টিতে ফোকাস করতে চান এবং চিন্তা করেন আমি টি-টোয়েন্টি খেলে যাব, কারণ এটা তো অনেকদিন খেলা যায়। টি-টোয়েন্টিতে যদি আপনার মনোযোগ থাকে, তাহলে আপনার অন্য একটা সংস্করণে মনোযোগ বা পারফরম্যান্স খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। অনেক ভালো টেস্ট প্লেয়ার দেখবেন, যারা টি-টোয়েন্টিতে তে মনোনিবেশ করছে, টেস্টে তাদের পারফরম্যান্স হয়নি এবং তারা আস্তে আস্তে সরে আসছে। এটা খুবই ন্যাচরাল।”
“আমাদের দেশে যে ব্যাপারটা হয়েছে যে আমাদের এই প্লেয়ারগুলোকে আমরা চাই না, তারা মন খারাপ করে যাক। আমরা চাই তারা হাসিমুখে যাক। নিজেরা সিদ্ধান্ত নিক। তবে যত তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ততই ভালো। কিন্তু একটা সময় তো আসবে যদি সিদ্ধান্ত না নেয়, তখন কোচিং স্টাফ, ম্যানেজমেন্ট, সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটাই হবে।”
মুস্তাফিজ ছাড়াও অন্য অনেক ক্রিকেটার যে সংস্করণ বাছাই করে খেলছেন, এটাও তুলে ধরলেন বিসিবি সভাপতি। এখানেই তিনি টেনে আনলেন সাকিবের প্রসঙ্গ।
“অলরেডি তো রিয়াদ টেস্ট থেকে সরে আসছে, তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছে না। মুশফিক এখনও খেলছে, তবে ওর চিন্তা-ভাবনাও জানা যাবে। আর আছে সাকিব… সাকিবের ব্যাপারটা আবার এদের কারও সঙ্গে মেলে না। সাকিবের ব্যাপারটা বলাটা কঠিন। সব সংস্করণে সবাই ওকে চায়, কিন্তু ওকে পাওয়াটা কঠিন। আমরা আসলে নিজেরাই জানি না, ও কোনটা খেলবে কোনটা খেলবে না। ওর সাথে আমি যখন কথা বলি, তখন মনে হয় ও সবগুলোই খেলতে চায়। কিন্তু আবার যখন খেলা আসে, তখন দেখা যায় ওর সমস্যা। কিছু না কিছু সমস্যা থাকে, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।”
“তবে আমি মনে করি যে, এই সিদ্ধান্তটা ক্রিকেটারদেরই নিতে হবে। খামাখা এগুলো মিডিয়াতে না বলে বোর্ডের সঙ্গে বসেই সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। তাতে বোর্ডেরও একটু সুবিধা হয় সব কিছু চিন্তা করতে। কেউ যদি বলে এটা খেলব না, তখন আমরা বলতে পারি, ‘তিন মাস খেলো, ততদিনে আমরা রেডি করতে পারি (অন্য কাউকে)।’ এ জিনিসগুলো বোর্ডের সঙ্গে বসে করলে সহজ হয়। বাইরে কিন্তু তা-ই হয়।”
দলের প্রয়াজন হলে মুস্তাফিজকেও টেস্টে পাওয়া যাবে, এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই নাজমুল হাসানের।
“ওকে (মুস্তাফিজকে) এমনিতেও তো টেস্টে নেয় না। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দিয়েছে ও (চুক্তিতে সই করেছেন), তাতে করে বোঝা যাচ্ছে আসলে টেস্টের প্রতি ওরও আগ্রহ ওরকম নাই। এটা বাস্তবতা। এটা আমরা জানি। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে যদি এমন অবস্থা হয়, আমাদের কাছে এখন কোনো ফাস্ট বোলার নাই এবং আমাদের একটা ফাস্ট বোলার দরকার, তখন দেশের স্বার্থে খেলবে না? অবশ্যই খেলবে। এখানে তো কোনো আলাপ আলোচনারই বিষয় নাই।”
“ও তো আইপিএলে যাওয়ার আগেও বলে গেল, আইপিএলের চেয়ে আমার দেশের জন্য খেলা গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদেরই (সংবাদমাধ্যম) বলেছে, আমাকে যদি শ্রীলঙ্কা সিরিজে রাখা হয়, আমি আইপিএল খেলব না, এটা পরিষ্কার বলেছে। দেশের প্রয়োজন হলে আমি খেলব না, এমন কোনো ক্রিকেটার নেই।”
টেস্ট অধিনায়ক ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনায় কোন বিষয়গুলো ছিল, সেগুলোরও কিছুটা শোনালেন নাজমুল হাসান।
“দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, পারফরম্যান্স এগুলো নিয়েই আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মুমিনুল ছিল এখানে। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, হঠাৎ এরকম পারফরম্যান্সের কারণটা কী। অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। একটা জিনিস যেটা কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওরা আমাকে উদাহরণ দিচ্ছিল শেষ চার-পাঁচটা টেস্ট ম্যাচের। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে যখন খেললাম প্রথম টেস্টে, আমরা ভালোই মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে একেবারই ধরাশায়ী। বাইরের খেলাগুলোর কথা বলল ওরা, নিউ জিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এরকম অনেক টেস্টের কথা নিয়ে এলো।
“আসলে প্রথম টেস্টটা আমরা মোটামুটি ভালোই খেলি, দ্বিতীয় টেস্টে গিয়ে একেবারই মনে হয় আমরা আর পারছি না। এর পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে, ওরাও বুঝতে পারছে না এত তাড়াতাড়ি। কিন্তু ওরা যেটা বলল যে, আসলে ১০ দিনের খেলার মাইন্ডসেট নেই। দশদিন টানা খেলতে হবে, এই মাইন্ডসেট অনেক ক্রিকেটারের নেই। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।”
সেই চ্যালেঞ্জ আবার বাংলাদেশ দলের সামনে। আগামী রোববার থেকে শুরু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।