শুক্রবার
সকালে উপজেলার হাজি খান রওশন আলী প্রাইভেট হাসপাতালে নামে একটি অনুমোদনহীন
ক্লিনিকে সিজারের সময় প্রসূতির মৃত্যু হয়; বাঁচানো যায়নি সন্তানকেও।
বিকাল
৪টায় উপজেলার মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ চত্বরে গ্রাম্য সালিশে সাড়ে তিন লাখ টাকায়
মৃত্যুর বিষয়টি দফারফার পর রাতেই কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।
তবে
বিষয়টি শনিবার বিকাল পর্যন্ত জানে না নড়াগাতী থানা পুলিশ।
ওসি
সুকান্ত কুমার সাহা বলেন, “এ ব্যাপারে এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ
আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবর
পেয়ে শনিবার কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল মল্লিককে প্রধান করে তিন
সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আকতার জানান।
তিনি
আরও বলেন, চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্লিনিকটি অনুমোদনের আবেদন করলেও যোগ্যতা না থাকায় দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক ও ক্লিনিকের মালিকপক্ষ পলাতক রয়েছে।
হাজী
খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক খান শাহীন সাজ্জাদ
ওরফে পলাশ।
নিহত
শিউলী বেগম গোপালগঞ্জ সদর থানার বড়ফা গ্রামের অটোরিকশার চালক জিন্নাত শেখের
স্ত্রী। বাবার বাড়ি কালিয়া উপজেলার খাশিয়াল ইউনিয়নের পেচী ডুমুরিয়া গ্রামে। তাদের
চার বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। দ্বিতীয়বার সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা
যান।
শনিবার
জিন্নাত শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিজারিয়ানের জন্য ১৫ হাজার টাকার
চুক্তি হলে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে শিউলীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। একটু পরে রোগীকে
অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যায়।
“ইনজেকশন
দেওয়ার পর শিউলী ছটফট ও চেঁচামেচি করতে থাকেন। আমরা রোগীর কাছে যেতে চাইলেও
কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। কিছু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর প্রেসার কমে গেছে।
দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীকে খুলনা মেডিকেলে পাঠাতে চায়। তখন আমরা বাধা দিলে
হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। মানুষ জড়ো হয়। তখনি জানতে পারি, রোগী মারা গেছেন।”
এরপর
হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আর সেই ফাঁকে পেছন দরজা দিয়ে
চিকিৎসক ও হাসপাতালের লোকজন দ্রুত সটকে পড়ে বলেও অভিযোগ করেন জিন্নাত।
এরপর
সালিশে আপসের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলায় লড়তে গেলে
আমারও দৌড়াতে হবে, অর্থ খরচ করতে হবে। কিন্তু আমি একজন সামান্য ইজিবাইক চালক। সেই
চিন্তা করে গ্রাম্য সালিশে অনেক দরকষাকষির মাধ্যমে অবশেষে সাড়ে তিন লাখ টাকা
ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।
“৫০
হাজার টাকা নিহতের মিলাদ বাবদ দিয়েছে। বাকি তিন লাখ টাকা রোববার আমার নাবালক শিশু
জামিলার (৪) নামে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা আছে।”
সিজারিয়ানের
সময় কোন চিকিৎসক ছিলেন তাও জানেন না বলে জানান মৃত শিউলীর স্বামী।
শিউলীর
বাবা আকবর মোল্যা বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় পাঠিয়ে দেওয়ার সময় আমরা শিউলির
মৃত্যুর খবর জানতে পারি।“
সমঝোতার
বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা গরিব মানুষ মামলা চালানোর সামর্থ নেই।”
সালিশদার
মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষের লোকজনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ হয়। প্রকৃতপক্ষে
নিহতের স্বামী এবং বাবা উভয়েই নিতান্ত গরিব মানুষ। নিহতের নাবালক শিশু জামিলার (৪)
ভবিষ্যতের জন্য নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে সালিশনামায় উভয়পক্ষের নাম
দস্তখত করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।”
হাজী
খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক অনুপ দাস বলেন, “বিষয়টি
মীমাংসা হয়েছে।”
তবে
এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
অপারেশন
ও মৃত্যুর বিষয়ে বক্তব্য জানতে ক্লিনিকের মালিক পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।