ক্যাটাগরি

সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’, ৬ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের এ ঘূর্ণিচক্রের নাম দেওয়া হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আসানি। সিংহলা ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। আসানি নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা।

দক্ষিণ আন্দামান সাগরে শুক্রবার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা ঘনীভূত হয়ে শনিবার নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেয়। এরপর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে রোববার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলটিনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’।

সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সংকেত বাড়িয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিণত হতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। বর্তমান গতিধারা ধরে রাখলে আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ এ ঝড় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা ঊপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে উত্তরপুর্ব দিকে বাঁক নিতে পারে। তারপর ওড়িশা উপকূলের এগিয়ে যেতে পারে আরও উত্তরপূর্বে।

তবে আসানি আদৌ উপকূল অতিক্রম করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, বাঁক নেওয়ার পর দুর্বল হতে হতে আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ ওই ঘূর্ণিচক্র সাগরেই ফের গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।  

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাঙ্গামাটি, সৈয়দপুর, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এখন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় একে বলা হচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ।

শনিবার রাঙ্গামাটিতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে; ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, “এই তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরও বিস্তার লাভ করতে পারে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।”

এর আগে এপ্রিলে দুই দফা তাপপ্রবাহ বয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে; সে সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

মে মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে) ও দেশের অন্যত্র একটি বা দুটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

 

আরও পড়ুন

বদলাচ্ছে তাপদাহের মানচিত্র
 

নিম্নচাপের কারণে বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত