সোমবার ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (খসড়া): পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইনটি নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরে টিআইবি।
আইন করার উদ্যোগ নেওয়ার পর ওই খসড়া সবার মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। গত ২৭ এপ্রিল মতামত দেওয়ার শেষ দিন ছিল।
টিআইবি তাদের মতামত সরকারের কাছে পাঠানোর
পর সংবাদ সম্মেলন
করে সেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরল।
প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন দিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম। এছাড়া আইনটির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ের ল’ ফ্যাকাল্টির সিনিয়র লেকচারার এরশাদুল করিম।
পরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, “মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য আইন করার উদ্যোগের জন্য স্বাগত জানাই। কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার নামে, সরকারি বিশেষ করে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যা মানুষের সংবিধান স্বীকৃতি মৌলিক অধিকার-বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ব্যক্তিগত তথ্যের স্বাধীনতা, গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।”
“আইনে কিছু কিছু ধারণার কথা বলা হয়েছে, যার ব্যাখ্যা নেই। আইনে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার নিয়ন্ত্রক হিসাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এর দরকার ছিল না। এটা ওই এজেন্সির এখতিয়ার বহির্ভূত। এই এজেন্সি যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে বলে বলা হয়েছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বলে গঠিত ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে
প্রস্তাবিত আইনে ‘অতি মানবীয় সংস্থা’য়
রূপান্তরের
ব্যবস্থা
করা হয়েছে
বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জমান।
তিনি বলেন, “এর ফলে অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে অত্যন্ত নেতিবাচক। তিক্ত অভিজ্ঞতা। এজেন্সির সীমাহীন ক্ষমতা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের মূল উদ্দেশ্যকে ধূলিসাৎ করবে এবং আইনটিকে কালো আইনে রূপান্তর করবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে এ আইন প্রয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠনের দাবি জানান তিনি।
ইফতেখারুজ্জমান বলেন, “এ আইনের অধীনে পুলিশের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়ছে। এটি পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত। এটা বিশেষায়িত ক্ষেত্র।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এই খসড়া ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সেটি না হলে, আমাদের শঙ্কা হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি নজরদারি ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে ধাবিত হবে।”
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, “প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় যদিও ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তবে দীর্ঘ শিরোনাম দেখে এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আলোচ্য আইনটি ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত।
“‘ব্যক্তিগত তথ্য’ শব্দগুলোর কোনো সংজ্ঞা বা উদাহরণ এতে যোগ করা হয়নি, যা বিশ্বের মোটামুটি সব দেশের আইনের মধ্যেই খুবই সাধারণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যক্তিগত তথ্য শব্দগুলোর সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্তি ব্যতীত খসড়াটি আইন হিসেবে পাস হলে,
তা মারাত্মকভাবে অপব্যবহার হওয়ার সুযোগ আছে।”
টিআইবি বলছে,
“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এ বর্ণিত ডিজিটাল সুরক্ষা এজেন্সির কার্যাবলী আর ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের
ঘটনাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এবং ব্যক্তিগত
তথ্য সুরক্ষা আইন এর মূল উদ্দেশ্য মাথায় রাখলে নির্দ্বিধায়
বলা যায় যে, এই ব্যাপারটি
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যকে
ব্যাহত করে এটি একটি কালো আইনে পরিণত হবে।”