‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’ এর মতো গানের এই গীতিকারের মরদেহ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ সাহেদ চৌধুরীসহ অন্যরা।
এরপর বিএফইউজে, ডিইউজে, পিআইবি, কবিতাপত্র, নোয়াখালী সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষও থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
রোববার রাতে আজিমপুরের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে কে জি মোস্তফাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সোমবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানানোর আগে জানাজায় অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার, আলমগীর মহিউদ্দিন, মোস্তফা কামাল মজুমদার, আবদুর রহমান খান, জাকারিয়া কাজল, আবদুল জলিল ভুইয়া, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের দুই অংশের ওমর ফারুক, এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, খায়রুজ্জামান কামালসহ অনেকে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “কে জি মোস্তফা ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমাদের জন্মের পর থেকে, দীর্ঘদিনের পরিচয়। তার গুণ, তার কাহিনী, তার গান, তার সাংবাদিকতা …।
“তবে যে কথাটা… এত বড় একজন গুণীকে সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনও সম্মান করেনি। এটা বেদনা, এটা দুঃখের। আমরা তাকে স্মরণ করব সবসময়। তাকে আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুন।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, “কে জি ভাইয়ের মৃত্যু- একটা অঙ্গহানির কথা বলছি। এই জাতির একজন … অত্যন্ত লজ্জিত। আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি নাই, সন্মান দিতে পারি নাই।
“যে রাষ্ট্রযন্ত্র এত বধির- আপনারা জানেন যে, সেই পুরস্কারকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, নির্লজ্জ দলীয়করণ করা হয়েছে। আমলারা এদেশের বুদ্ধিজীবীদের বিদ্বানজনদের মূল্যায়ন করে। এসব কেলেঙ্কারির কথা আপনারা জানেন। আমি ক্ষুদ্র একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে চেষ্টা করেছিলাম যাতে উনি সম্মাননা পান। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র এতো বধির যে সেখানে এই কর্ণকুহুরে তাদের এটা পৌঁছায় না।”
কে জি মোস্তফার আত্মা পরকালে যেন শান্তিতে থাকেন, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চান এই হাসান হাফিজ।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, “তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। গুণী মানুষ ছিলেন।… তার এই মৃত্যু জাতীয় প্রেসক্লাবে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা পূরণ হওয়ার নয়।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি থিম সং আছে- ‘প্রেসক্লাব আমার সেকেন্ড হোম..’। এই গানেরও রচয়িতা কে জি মোস্তফা।
প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে বেলা আড়াইটায় আজিমপুর কবরস্থানে কে জি মোস্তফাকে দাফন করা হয় বলে তার ছোট ছেলে খন্দকার রউফুল হাসান জানান।