ওই
সময় রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা রেল লিংক ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ
অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের রেয়াতকাল শেষ হয়ে ঋণ পরিশোধকাল শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন,
আগামী ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালে গিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঋণ পরিশোধের বাস্তবতার মুখোমুখি
হবে।
এসময়
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ঋণ পরিশোধের বর্তমান অবস্থাকে আমরা যদি ‘সবুজ’ বলি
তাহলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে তা ‘হলুদ’ হতে পারে, যাতে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।”
সোমবার
সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয়।
আরেক
প্রশ্নের জবাবে তিনি শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করার পক্ষপাতি নন
বলে মন্তব্য করেন। শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে তিনি শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এসময়
বৈদেশিক ঋণ নেওয়া ও ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং
অর্থ বিভাগকে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন
তিনি।
আলাপকালে
ড. দেবপ্রিয় বৈদেশিক ঋণের চাপ সামলাতে কর আহরণ বাড়ানো, বহির্খাতের বর্তমান চাপ মোকাবিলায়
সুরক্ষা দেওয়া এবং দায়দেনা পরিস্থিতির সামগ্রিক, স্বচ্ছ ও নিয়মিত তদারকির জন্য সরকারকে
পরামর্শ দেন।
সাম্প্রতিক
সময়ে দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানসহ উন্নয়ন সহযোগীরা এখন তুলনামুলক সুদের
হার বাড়ানোর কারণে স্বস্তির জায়গাটা কমে আসছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি
বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২০ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ
বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে এখনও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ঋণ
প্রায় ৩৫ শতাংশ। জিডিপি‘র মোট ৭৭ শতাংশের বেশি বৈদেশিক ঋণ হলে তা দেশের অর্থনীতিতে
সমস্যার সৃষ্টি করে বলে ধরা হয়।
এই
অর্থনীতিবিদ বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের যে পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ পাওনা রয়েছে তা উদ্বেগের
নয় বরং সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছি। তবে বিগত তিন বছরের ব্যবধানে যেভাবে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের
প্রবণতা বাড়ছে তা কিছুটা উদ্বেগের।
“বিগত
২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে দেশি বিদেশি মিলে প্রতিবছর গড়ে ঋণ বেড়েছে
১৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন করে বা জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরেই সরকারের
ঋণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ৫৪ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয় অভ্যন্তরীণ খাত থেকে।”
মূলত
২০১৭ সালের পর থেকেই বাংলোদেশে ঋণ গ্রহণের উল্লম্ফন ঘটেছে, যোগ করেন তিনি।
একটি
প্রতিবেদন তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ১৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন
ডলারের দেনা জমা হয়েছে। এটা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। জিডিপি ও
ঋণ অনুপাতের এ হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। এরমধ্যে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলারই অভ্যন্তরীণ
ঋণ আর বাকি প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ।
“এ
অঞ্চলে জিডিপির সর্বোচ্চ ১২০ শতাংশ বিদেশি ঋণ নিয়েছে ভুটান। আর শ্রীলংকা জিডিপির ১১২
দশমিক ২ শতাংশ ঋণ নিয়ে এখন পরিশোধ করতে না পেরে মহাসংকটে পড়েছে।“
আরেক
প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। বরং
শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশকে তার দায়দেনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের
মধ্যে রাখতে হবে এবং সরকারের ইতোমধ্যে যেসমস্ত নীতি বা আইন রয়েছে, সে অনুযায়ী সঠিক
সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
পরিসংখ্যান
তুলে ধরে তিনি জানান, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঋণ বাড়ার হার ছিল ৪৪ শতাংশ। কিন্তু
২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত দশকে আমাদের
দায় দেনার পরিমাণ আগের ১০ বছরের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।
দায়দেনা
বাড়ার এ হার খুবই বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেবপ্রিয়
বলেন, এ মুর্হূতে অভ্যন্তরীণ দায়দেনা রয়েছে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলার বা মোট ঋণের ৫৪ শতাংশ।
“এটা এখন প্রায় ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। অথচ আগের দশকে
এটা ছিল ১৩ শতাংশ। সুতরাং দায়দেনার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসই বেশি।”
অপরদিকে
বৈদেশিক দায়দেনা মোট ঋণের ৪৬ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক
ঋণ বেশি বাড়েনি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের পর থেকেই তা বেড়েছে।