“আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম এটাই আমাদের
ব্যর্থতা। বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখেছি মানুষকে বিশ্বাস
করতে হয়। মিল মালিকরা কথা রাখলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।”
সোমবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে টিপু
মুনশি যখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন, তখনও ঢাকা ও চট্টগ্রামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার
সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চলছিল।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে একটি দোকানে
‘গোপনে মজুদ করে রাখা’ ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পেয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
আর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তিনটি দোকানকে তারা জরিমানা করেছেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি
দামে তেল বিক্রি করায়।
এ
মাসের শুরুতে ঈদের আগে খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় রান্নায় ব্যবহৃত সয়াবিন তেল।
এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সায় নিয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকার
কাছাকাছি নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
বাড়তি লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল
অবৈধভাবে মজুদ করেছেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ধারণা।
তেল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া
শুরু হয়েছে জানিয়ে টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের যেসব
ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে চিহ্নিত। যখন যেখানে প্রয়োজন,
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু তারা সংখ্যায় লাখের ওপরে। এটা
একটা সমস্যা।”
চট্টগ্রামের দোকানে ‘গোপন ভাণ্ডারে’ ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন
চট্টগ্রামে এবার দোকানের গুদাম থেকে হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার
দোকানে তেল নেই, দোকানির বাড়িতে ২৩২৮ লিটার সয়াবিন
ব্যবসায়ীদের এই মজুদদারিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর আস্থা নড়ে গেলেও দাম বৃদ্ধির
সিদ্ধান্ত নিয়ে তার দ্বিমত নেই।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সত্য যতই
কঠিন হোক, তা মেনে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধি
মেনে নিন। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের এখনকার দামও বিবেচনায় নিতে হবে।”
বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাব দেন, বাংলাদেশে এখন প্রতি লিটার
বোতলজাত ভোজ্য তেলের নির্ধারিত দাম ১৯৮ টাকা। ভারতে একই পরিমাণ তেল কিনতে বাংলাদেশি
মূদ্রায় ২২৪.৬৫ টাকা খরচ হয়। পাকিস্তানে লাগবে ২৩৮.৬৯ টাকা এবং নেপালে ২১৪.৭৫ টাকা।
“আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি, যাতে তেলের ক্রয় মূল্য,
পরিবহন ব্যয়, শুল্কসহ সব ধরনের ব্যয় ধরে যৌক্তিক পর্যায়ে ভোজ্য তেলের মূল্য নিশ্চিত
করা যায়। ভোজ্য তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিলগেইট থেকে শুরু করে পাইকারি এবং খুচরা
পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অনিয়ম ধরা পরলে প্রয়োজনীয়
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে তেলের দাম নির্ধারণের পর আন্তর্জাতিক
বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ফলে রোজার মধ্যেই আরেকবার দাম পরিবর্তন করা ‘প্রয়োজন ছিল’ বলে
মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তার ভাষ্য, রোজায় যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সেজন্য
তিনি মিল মালিকদের অনুরোধ করে দাম বৃদ্ধি ‘কিছুটা বিলম্বিত’ করেছিলেন।
“এখনতো দেখছি রোজার ভিতর একবার দাম বৃদ্ধি করাই ভালো
ছিল। মিল মালিকরা মেনে নিলেও খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ঈদের পরে তেলের দাম বাড়বে, এটা সবাই অনুমান করতে পারছিলেন।”
সয়াবিন তেল সংকট: পরিকল্পনায় ঘাটতি দেখছেন হেলাল উদ্দিন
৪০ হাজার টন সয়াবিন তেল মজুদদারদের ঘরে, ধারণা ভোক্তা অধিদপ্তরের
বর্তমানে তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা
তুলে ধরে টিপু
মুনশি বলেন, “এখন যেটা প্রতি লিটার ১৯৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক
বাজারে প্রতিটন ১৭৫০ ডলার করে কেনা হয়েছে ধরে নিয়েই ঠিক করা হয়েছে। আর গত রোববার আন্তর্জাতিক
বাজারে প্রতি টনের দাম ছিল ১৯৫০ ডলার।”
তবে তেলের উচ্চমূল্যে দরিদ্র মানুষ যাতে চাপে না পড়ে,
সেজন্য সরকার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য
পণ্য সরবরাহ করবে এবং আগামী জুন মাস থেকেই টিসিবি এসব পণ্য সরবরাহ করবে বলে জানান
মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ভোজ্যতেল আমদানিকারক, পরিশোধন মিল
মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত
সচিব (আইআইটি) মালেকা খায়রুন্নেছা, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআই এর সিনিয়র
সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান
সভায় উপস্থিত ছিলেন।