সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি যে তথ্য প্রকাশ
করেছে, তাতে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৩৩৪
কোটি ৪৩ লাখ ডলার আয় করেছে।
রপ্তানির এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়
৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
গত
২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ২০৭ কোটি ২৭
লাখ ডলার। আর পুরো অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি
থেকে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পেয়েছিল।
চলতি
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের জন্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৫৯৬
কোটি ডলার। আর পুরো অর্থবছরে রপ্তানি থেকে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য রয়েছে।
আর্থাৎ ১০ মাসেই পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রপ্তানি আয়।
গেল এপ্রিলে ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি
করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের এপ্রিলের তুলনায় ৫১ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৪১
শতাংশ বেশি।
২০২১
সালের এপ্রিলে ৩১৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল আর চলতি অর্থবছরের এপ্রিলের
জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইএবির সহ-সভাপতি
মোহাম্মদ হাতেম জানান, পোশাক রপ্তানিতে ইতোমধ্যে বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সুতাসহ
বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বাড়ায় এমন প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এর বাইরে দেশের সামগ্রিক রপ্তানির পরিমাণও কিছুটা
বেড়েছে বলে জানান রপ্তানিকারকদের এই নেতা।
ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বে স্থবিরতা
এবং সারা পৃথিবীতে মহামারীর প্রভাবের বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের এমন সুদিন ফিরেছে
দীর্ঘ নয় মাস ধরে দুই অংকের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে মহামারীর
প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি আয়ে মন্থর গতি থাকার পর গত বছর অগাস্ট মাস থেকে উচ্চ
প্রবৃদ্ধি শুরু হয়।
ফাইল ছবি
রপ্তানিতে অগাস্টে ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে
৩৮ শতাংশ, অক্টোবরে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, নভেম্বরে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৪৮ দশমিক
২৭ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মার্চে ৫৪
দমমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পোশাক খাতে আয় হয়েছে ৩ হাজার
৫৩৬ কোটি টাকা; যেখানে প্রবৃদ্ধি ৩৬ শতাংশ। এই খাতে ৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের
পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করা হয়, যা ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছে।
ইএবির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “বাকি দুই মাসে আরও ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে
এবার ৪২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে পোশাক রপ্তানি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবছর সুতার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
সুতার দাম বাড়ার কারণে ২০১০ সালেও ৪৪ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
“সেবার সুতার দাম উঠেছিল প্রতি পাউন্ড ৭ ডলারে। এবার দাম দ্বিগুণ বেড়ে
৫ দশমিক ২০ ডলারে উঠেছে।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইএবির সহ-সভাপতি বলেন, “একটি টিশার্টে সুতার অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ।সুতার দাম দ্বিগুণ হওয়া মানে
হচ্ছে পোশাক রপ্তানিতে ৪৫ শতাংশ গ্রোথ এডজাস্ট করতে হবে।
“এছাড়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য কাঁচামালের
খরচ বেড়ে গেছে। এসব কারণে গ্রোথ বেশি দেখা যাচ্ছে। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির পেছনে পোশাক
রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়াও অবদান রাখছে।”
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী ঘরের শোভা বর্ধক কাপড় হোম টেক্সটাইল
খাতে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলার।
সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে হোম টেক্সটাইল খাতও।
অর্থবছরের ১০ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১০৪
কোটি ডলার; যাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে
১০১ কোটি ডলার, যাতে প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৩২ শতাংশ।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বরাবরের মতোই পিছিয়ে
যাচ্ছে। এই খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ শতাংশ
এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।