সোমবার বেলা ১টার দিকে পার্শ্ববর্তী নদীসমূহের পানি বাড়লেও দুপুরেই ভাটার টানে তা নেমে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
এদিকে আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে স্থানীয়দের নিয়ে উপকূলরক্ষা বাঁধের ভাঙন কবলিত স্থানে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে দুর্যোগ-প্রস্তুতিসভা করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্বেচ্ছাসেবকসহ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টারসমূহ তত্ত্বাবধায়ন, আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় আসানি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ২৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। শ্যামনগরে ১৮১টি কেন্দ্রে ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আশাশুনির ১০৬টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের জন্য।
তাছাড়া কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রাখা হয়েছে এবং ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ পর্যাপ্ত সুপেয় পানি এবং উপকূলীয় দুটি উপজেলায় দুই হাজার ৯৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান হুমায়ুন কবির।
এর বাইরে ৮৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় আসানি মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় যেন কোনো ধরণের জানমালের ক্ষতি না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে আসানির প্রভাবে সাতক্ষীরায় হালকা ও মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হালকা দমকা হাওয়া বইছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি ডিভিশনের (শ্যামনগর ও আশাশুনি) ৪৪টি পয়েন্টে সাড়ে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে ঝুঁকিতে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ ও আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আসানি উপকূলীয় এলাকার নতুন আতঙ্ক ছড়ালেও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, উপকূলীয় এলাকায় এখনও পর্যন্ত ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত অব্যাহত রয়েছে। এটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানতে পারে। দিক পরিবর্তন হলে সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ততক্ষণে এটি দুর্বল হয়ে পড়বে।
উপকূলীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও সর্বনাশ ডেকে আনে জলোচ্ছ্বাস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। ভেসে যায় মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলের মাঠ। ঘর-বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। প্রতিবারই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে।
এ সমস্যা থেকে স্থায়ী প্রতিকার দাবি করেন তারা।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিপিপি আঞ্চলিক পরিচালক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ জনবসতি গাবুরাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পরির্দশন করে সেখানকার সাইক্লোন শেল্টারের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ দুর্যোগকালীন সময়ে বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর লক্ষ্যে অন্তত ৩০ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ মজুদ রাখার কথা জানিয়েছে।
শ্যামনগরের পদ্মপুকুর গ্রামের জলবায়ুকর্মী শাহিন আলম বলেন, সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরুর পর সোম ও মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে পরবর্তীতে ভাটার টানে পানি নেমে যাওয়ার পাশাপাশি ঝড়ো বাতাস কমতে শুরু করলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
নদীতে জোয়ারের পানি ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পেলে নিচু হয়ে যাওয়া উপকূলরক্ষা বাঁধ ছাপিয়ে পানি ভেতরে ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি ওই জলবায়ুকর্মীর।
শ্যামনগরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলরক্ষা বাঁধ দিয়ে ঘেরা গাবুরা ইউনিয়ন।
এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, ইয়াশের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত উপকূলরক্ষা বাঁধের অন্তত ১০/১২টি স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন মাটি না দেওয়ায় কয়েকটি অংশ নিচু হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চর দেবে আরও কয়েকটি অংশের বাঁধ সরু আইলে পরিণত হয়েছে।
“এমতাবস্থায় জোয়ারের চাপ বৃদ্ধি পেলে ও ঝড়ো বাতাসের সৃষ্টি হলে অনেক অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ইউনিয়নের মানুষ।”
তবে শেল্টারগুলোর প্রস্তুতির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সতর্কবার্তা জারির সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হবে। শুকনা খাবার, সুপেয় পানি ও দিয়াশলাইসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র মজুদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, প্রায় সব বাঁধ মেরামত করা আছে। বাকিগুলোতেও কাজ চলছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।