ক্যাটাগরি

দর কষাকষি করে লাভ নেই, নির্বাচনে আসুন: ওবায়দুল কাদের

মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় তিনি বলেন, “বিএনপিকে বলব এদিক সেদিক না ঘুরে, দরকষাকষি না করে নির্বাচনে আসুন। আমরা অনুরোধ করছি নির্বাচনে আসুন।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

“নির্বাচনে তখন সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। কর্তৃত্ব থাকবে সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের নির্দেশনায় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চলবে না। তারাও নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।”

ইভিএম পরের ব্যাপার, আগে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতায় হস্তান্তর করুন, বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রাখেন, “ইভিএম পরের ব্যাপার কেন? আপত্তি কোথায়?

বহু দেশে ইভিএম ব্যবহারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনারা নির্বাচনে কারচুপি করতে চান। কারচুপি জালিয়াতি এড়ানোর জন্য এই ইভিএম ব্যবস্থার চেয়ে আধুনিক কোনো পদ্ধতি নেই নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতি ঠেকানোর জন্য।

“এতে আপনাদের আপত্তি থাকবে কেন? সরকারের পদত্যাগ করতে হবে কেন? আমরা কি অন্যায় করেছি।”

কাদের বলেন, “এই ধরনের কথা দেশের মানুষ ১৩ বছর যাবৎ শুনছে। গত নির্বাচনের সময়েও বিএনপি ও তাদের জোটের হাকডাক শুনছে। কিন্তু পানি ঘোলা করে অবশেষে তারা ডায়ালগেও এসেছে এবং নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন।

“এবারও সেই একই কথা নতুন করে বলছে। বিএনপি নেতারা ভালো করেই জানে দলের অস্তিত্ব রক্ষায় তাদের নির্বাচনে আসতেই হবে। তাদের কোনো বিকল্প নেই।

“তাই বিএনপিকে বলব, দরকষাকষি করে লাভ নেই। সরকার দরকষাকষিতে সংবিধান থেকে নড়বে না। যেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচন হয়, সেভাবেই সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে।”

বিএনপি দরকষাকষির জন্য নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জনগণকে আস্থায় নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের আর কোনো বিকল্প নেই।

“নির্বাচনে যদি জনগণ আপনাদের ভোট দেয়, নির্বাচিত করে, আমরা যদি হেরেও যাই, তারপরেও আমরা নির্বাচন কমিশনের এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। সব সময় আমাদের রীতি-নীতি অনুযায়ী আমরা এটা করে যাব।”

জনগণকে আস্থায় নিয়ে সরকার সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে এবং জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে জানিয়ে তিনি বিএনপিকে আবারও দরকষাকষি না করে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানান।  

আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে ইভিএম চায়, কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলেছে, সর্বোচ্চ ১৩০ আসনে তাদের ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা আছে-এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি  বলেন, “আমরা চাই নির্বাচন কমিশন তাদের সক্ষমতা অনুযয়ী করুক। সেটা যদি না পারে সেটা ভিন্ন কথা। আমরা আওয়ামী লীগ দলগতভাবে আমরা চাই।”

এসময় কুমিল্লার চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই হামলার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। শেখ হাসিনার আমলে কোনো ধরনের অপকর্ম এই ধরনের কোনো অনিয়মের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। এখানেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এই ঘটনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে’ সরকারের অন্ধ সমালোচনা ও বিষোদগার করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“এলডিপি মহাসচিব নিজ হাতে গুলি ছুড়ে দু’জন রাজনৈতিক কর্মী আমাদের কৃষকলীগের দু’জন কর্মীকে গুলিবদ্ধি করেছে। যারা এখনো হাসপাতালে। এই বিষয়ে ফখরুল সাহেব একটি শব্দও বলেননি। পুরোপুরি চেপে গেছেন। এটা কি গণতন্ত্র?

“এই ধরনের সত্য গোপনে হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতিকে অস্ত্র দেওয়া এবং লালনের কাজটি তারা করে আসছেন তাদের জন্মলগ্ন থেকে। ক্ষমতায় থাকাকালেও তারা এটি করেছে।

“ফখরুল সাহেব আজকে একচক্ষু দিয়ে দেখেন। না হলে এলডিপি মহাসচিবের গুলি ছোড়ার বিষয়টি তিনি দেখতে পেতেন। তার বিবৃতি জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, প্রকৃত সত্য লুকিয়ে শিবের গীত গাওয়ার জন্য।”

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হামলার ইন্ধন যোগানো হয়েছে, বিএনপি মহাসচিবের এমন অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “জনগণের ধারণা ক্ষমতালিপ্সায় অন্ধ হয়ে বিএনপি মহাসচিব পলিটিক্যাল হ্যালোস্যানিশনে ভুগছেন।

 “ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হামলার পরিকল্পনা করা সন্ত্রাস চালানো গ্রেনেড হামলা, আগুন সন্ত্রাস; এসব তাদেরই চর্চা। আওয়ামী লীগ এসব অপচর্চা অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।

“সন্ত্রাসের পথ তারাই বেছে নেয় যারা ব্যালটের ওপর আস্থা হারিয়ে নির্বাচন বিমুখ হয়। ষড়যন্ত্র তাদের হাতিয়ার তারা গণতন্ত্রের পথে না হেটে ক্ষমতায় যেতে চোরাগোলি খুঁজে বেড়ায়।”

দলের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম নাদেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি, দক্ষিনের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।