ক্যাটাগরি

মমতার ‘বাংলা আকাদেমি’ সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদের ঝড়

রত্না রশিদ ২০১৯ সালে অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান পান। তিনি রীতিমত পশ্চিমবঙ্গ ‘বাংলা আকাদেমির’ অধ্যক্ষ বরাবর চিঠি লিখে নিজের ওই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

একই কারণে মঙ্গলবার সাহিত্য আকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক এবং সম্পাদক অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস।

এক বিবৃতিতে অনাদিরঞ্জন বলেছেন, কলকাতায় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কবিতাকে যে ভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে তিনি ‘বিরক্ত’। সেই কারণেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে তাকে স্মরণে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর থেকে সোমবার ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সোমবার বিকালের সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবং ‘বাংলা আকাদেমি’র সভাপতি ব্রাত্য বসু এবছর নতুন একটি পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। প্রতি তিন বছর পরপর ওই পুরস্কার দেয়া হবে।

‘নিরলস কবিতার সাধনা’ করার জন্য এ বছর ওই পুরস্কার দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। ‘কবিতা বিতান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ওই পুরস্কার পান।

মমতাকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে সুধী মহলে বিতর্ক শুরু হয়। এদিকে ফেসবুকে ওঠে নিন্দার ঝড়। কেউ কেউ ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। কেউ কেউ ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন।

নিজের পুরস্কার ফেরত দিয়ে চরম প্রতিবাদ করেছেন রত্না রশিদ।

অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস ও রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার

অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস ও রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার

মঙ্গলবার তিনি কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, যে ভাবে ‘বাংলা আকাদেমি’ এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে তার একটা প্রতিবাদ দরকার।

‘‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) একজন মান্যগণ্য মানুষ। উনি আমাদের সবার ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ওনার কাছ থেকে পরিপক্ব সিদ্ধান্ত আশা করি। বইয়ের তো একটা স্ট্যান্ডার্ড (মান) থাকতে হবে। পুরস্কার দিলেই উনি নিয়ে নেবেন কেন?’’

অন্যদিকে, আন্দামান থেকে অনাদিরঞ্জন আনন্দবাজারকে বলেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাংলা কবিতাকেই অসম্মান করেছে কলকাতা।

‘‘ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথকে বুকের মাঝে রেখেছি। তার কবিতা আমার কাছে দুর্মূল্য। সেই কবির জন্মদিনে যদি এমন পুরস্কার দেওয়া হয়, কবিতার নাম করে, তা হলে তা সামগ্রিক ভাবে কবিতাকেই অসম্মান করে। তারই প্রতিবাদে আমি সাহিত্য আকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’

মুসলিম বিয়ের গান-সহ নানা বিষয়ে গবেষণা রয়েছে রত্নার। তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ এবং গল্প লিখেছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে ৩০টির বেশি পুরস্কার। তার মধ্যে ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান তিনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘এই পুরস্কারের গরিমা রক্ষিত হয়নি। সাহিত্য সাধনার বিষয়। আমার এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।’’

অনাদিরঞ্জনও বলেছেন, তার ইস্তফা দেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগাযোগ নেই।

রত্না রশিদ বা অনাদিরঞ্জন কেউই নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না বলেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

রত্নার বলেন ‘‘সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব বলে তো আর প্রতিবাদ জানাইনি।’’

অনাদিরঞ্জন বলেছেন, ‘‘প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। এমন ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসেছি, করছি এবং ভবিষ্যতেও করব।’’