আবহাওয়াবিদরা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ধারণা করছিলেন, এ ঝড় উপকূলে আঘাত না হেনে বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে সাগরেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে এরপর গতিপথ খানিকটা পাল্টে এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র উত্তরপূর্বে অন্ধ্র উপকূলের কাকিনাদা ও বিশাখাপত্তমের মাঝামাঝি এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, ভারতের আবহাওয়া দপ্তর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধ্র উপকূলের জন্য রেড ওয়ার্নিং জারি করেছে। এর মানে হল, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখন ওই উপকূলে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে।
পিটিআই লিখেছে, আসানি এখন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের যে এলাকার দিকে যাচ্ছে, আবহাওয়াবিদরা ওই এলাকাকে বলেন ‘কোন অব আনসার্টেনিটি’। অর্থাৎ, কোন আকৃতির ওই এলাকা থেকে ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে যাবে, তা আগেভাগে বলা কঠিন।
ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিশেষ মুখ্য সচিব জি সাই প্রসাদ বলেছেন, ঝড়ের গতিপথের ওপর তারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের পাঠানো হয়েছে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।
মঙ্গলবার রাতের পূর্বাভাস অনুযায়ী আসানির সম্ভাব্য গতিপথ। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে আসানি দুর্বল হতে হতে বুধবার সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর খুব ধীরে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে অন্ধ্র আর ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। আরও দুর্বল হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার মঙ্গলবার দুপুরে আসানির যে সম্ভাব্য গতিপথ দেখিয়েছিল, তাতে ঝড়টি অন্ধ্র আর ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলের দক্ষিণ দিকে এগিয়ে দুর্বল হতে হতে সাগরেই হারিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে যে সম্ভাব্য গতিপথ জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার দেখিয়েছে, তাতে বুধবার সকাল নাগাদ আসানির অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে উপকূল অতিক্রম করার পর বিশাখাপত্তমের কাছ দিয়ে আবার এ ঝড় নিম্নচাপ আকারে সাগরের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে।
যেদিকেই যাক, আসানির প্রভাবে ইতোমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।
আবহওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
মঙ্গলবার দুপুরের পূর্বাভাসে আসানির সম্ভাব্য গতিপথ ছিল এরকম। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা ঘনীভূত হয়ে শনিবার নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেয়। এরপর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে রোববার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এটি ‘আসানি’ নাম পায়।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।আসানি নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলা ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।
বুধবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আর ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রিতে।
পুরনো খবর:
স্থলে আর ‘উঠছে না আসানি’, ঝরাচ্ছে বৃষ্টি
প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি কোন পথে যাচ্ছে?
বৃষ্টিতে শার্শায় বোরো ধানের ‘ব্যাপক ক্ষতি’
ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ এখনও দূরে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাংলাদেশ