ক্যাটাগরি

ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে উপকূলে বৃষ্টিপাত, সতর্কতা

এদিকে ঝড়ের কবল থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখতে নোয়াখালী ও পিরোজপুরে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

তবে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও এই শক্তি ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করছেন না আবহাওয়াবিদরা।

‘জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার’ এবং ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুর্বল হয়ে ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ‘আসানি’।

এরপর এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র আরও দুর্বল হতে থাকবে এবং উপকূলে পৌঁছানোর আগেই হয়ত নিম্নচাপে পরিণত হবে।

ঝড় হয়ে আঘাত না হানলেও আসানি অন্ধ্র্র, ওড়িশা ও বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম উপকূলে বৃষ্টি ঝরাবে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের ধারণা।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, আসানির প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূল জুড়ে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সকাল থেকে পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৪৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস ও কলাপাড়া রাডার স্টেশন।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভোর পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

কলাপাড়া রাডার স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৬টা ১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, আসানির প্রভাবে নোয়াখালীতে সকাল থেমে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সব ধরণের নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ফলে জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে হাতিয়ার নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

হাতিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ সেলিম হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে ২০১টি আশ্রয় কেন্দ্র। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৯০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গত মানুষকে নিয়ে আসা ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলীয় বাসিন্দাদের রক্ষায় ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগের আগে ও পরে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম গঠন করা হবে।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মেকাবেলায় দুপুরে জেলা ইউনিট কার্যালয়ে জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। সভায় যুব রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, আসানির প্রভাবে পিরোজপুরে সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে আবহাওয়ার গুমোট ভাব থাকলেও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ২৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের সভাপতিত্বে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলার ৭টি উপজেলায় ২৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত আছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের কাছে ৪২৫ প্যাকেট শুকনা খাবার তৈরি করা আছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম ও একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে জনগণকে সতর্ক করার জন্য মাইকিং করা হবে বলে জানান তিনি।

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মাওলা মো. মেহেদী হাসান জানান, জেলার মঠবাড়িয়ায় সাপলেজা এলাকাসহ সদর উপজেলা ও ইন্দুরকানীর কিছু এলাকায় নদীর পাড়ের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত আছে। সেই সব এলাকায় বাঁধ রক্ষায় তারা কাজ করছে।

পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, পিরোজপুর জেলায় আইভি এবং ওরস্যালাইন যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত আছেন।