ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো
জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতেই মারা যান কিংবদন্তি
সন্তুরবাদক। ৮৪ বছর বয়সী শিবকুমারের কিডনিও বিকল হয়ে গিয়েছিল।
আনন্দবাজার লিখেছে, উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে ‘সন্তুর’ নামে বাদ্যযন্ত্রটির আগে
তেমন মর্যাদা ছিল না। সেই যন্ত্রকে শাস্ত্রীয় সংগীতের মূল ধারায় প্রতিষ্ঠা দেওয়ার মূল
কৃতিত্ব কাশ্মিরের সন্তান শিবকুমারের।
হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার সঙ্গে
জুটি বেঁধে বলিউডের মূল ধারার সিনেমায় কালজয়ী কিছু সুর সৃষ্টি করেছেন শিবকুমার, যার
মধ্যে অন্যতম ‘সিসসিলা’।
প্রথিতযশা
এই শিল্পির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক টুইটে তিনি
লিখেছেন, “পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাজির প্রয়াণে আমাদের সাংস্কৃতিক জগত আরও দরিদ্র হল।
তিনি সন্তুরকে বিশ্বস্তরে জনপ্রিয় করেছিলেন। তার সংগীত আগামী প্রজন্মকে মুগ্ধ করতে
থাকবে।”
শিবকুমারের
মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন, জানাচ্ছেন শ্রদ্ধা।
তার মৃত্যুকে অনেকে ‘একটি যুগের সমাপ্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৯৬০
সালে প্রথম একক রেকর্ড তৈরি করেছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। পরে হরি প্রসাদ চৌরাশিয়া
এবং গিটারিস্ট ব্রিজ ভূষণ কাবরার সঙ্গে দুর্দান্ত সব সংগীত রচনার কাজ চালিয়ে যান।
শান্তরামের
‘ঝনক ঝনক বাজে পায়ে’র ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে শুরু করেন বলিউডের জন্য সংগীত রচনা।
এ ছাড়া যশ চোপড়ার লামহে, চাঁদনী এবং সিলসিলাসহ অনেক চলচ্চিত্রের জন্য সুর করে গেছেন
শিবকুমার।
টাইমস
অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ২০২০ সালে একটি সাক্ষাত্কারে শিবকুমার বলেছিলেন, “কিছু দৈব শক্তি
আমাকে সারা জীবন পথ দেখিয়েছে এবং আমার পুরো মনোযোগ ছিল সন্তুরের ওপর। কনসার্ট হোক
বা না হোক, হৃদয় ও মনে সংগীত ছিল এবং তা সবসময় বেজেছে।”
১৯৭৬
সালে প্রকাশিত হয় পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার অ্যালবাম ‘কল অফ দ্য ভ্যালি’। চৌরাসিয়ার
বাঁশি আর ব্রিজভূষণের গিটারের সঙ্গে সন্তুরের ওই যুগলবন্দি ভারতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি
হওয়া রেকর্ডগুলোর একটি।
১৯৩৮
সালের ১৩ জানুয়ারি কাশ্মীরের জম্মুতে এক সম্ভ্রান্ত সংগীতজ্ঞ পরিবারে শিবকুমার শর্মার
জন্ম। বাবা উমা দত্তশর্মা ছিলেন প্রথিতযশা শিল্পী।
পাঁচ
বছর বয়সেই শিবকুমার তার বাবার কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন। উমা সন্তুর
নিয়ে অনেক গবেষণা করেছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ছেলেকে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের
সন্তুরবাদক হিসেবে গড়ে তুলবেন।
বাবার
কাছে হাতেখড়ির পর শিবকুমার সন্তুর নিয়ে নিজেও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এরপরে
চলে যান মুম্বাইয়ে। সেখান থেকেই তিনি পরে সন্তুরের বাজনা ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বময়। বাংলাদেশে
উচ্চাঙ্গ সংগীতের উৎসবেও তিনি অংশ নিতে এসেছেন কয়েকবার।
সংগীত
জীবনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু পুরস্কার পেয়েছেন পণ্ডিত শিবকুমার। ভারত
সরকার ১৯৯১ সালে তাকে পদ্মশ্রী এবং ২০০১ সালে পদ্মবিভূষণ খেতাবে ভূষিত করে।