বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা সরকার ওই নির্দেশ দেয়।
সরকার থেকে সেনাবাহিনীকে ‘যদি কেউ সরকারি সম্পত্তিতে লুটতরাজ করার চেষ্টা করে বা জীবনের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তবে তাকে সরাসরি গুলি করার’ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে সরকারবিরোধ প্রবল বিক্ষোভ আর সহিংসতায় সোমবার শ্রীলঙ্কায় আটজন নিহত হয়েছেন।
তার একদিন পরই ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।
সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সোমবারই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। যার মেয়াদ আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে সোমবার মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিলেও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করছেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরাও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দিনভর বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ছাড়াও এদিন ক্ষমতাসীন আইনপ্রণেতাদের ও প্রাদেশিক রাজনীতিকদের ৫০টির বেশি বাড়ি-দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। নানা ঘটনায় নিহত হন ৮ জন। আহত হয়েছেন ২০০’র বেশি মানুষ।
তবে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর পরিস্থিতি মোটের ওপর শান্তই আছে বলে জানা গেছে। কলম্বো সড়কগুলোতে হাজার হাজার সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
যদিও তাদের উপস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার বিকালে কলম্বোর একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলা করেছে উত্তেজিত জনতা। তাদের অভিযোগ, ওই পুলিশ কর্মকর্তা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের যথেষ্ট সুরক্ষা দিচ্ছেন না।
সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করলেও বিক্ষোভকারীর মঙ্গলবারও কলম্বোর ‘গল ফেস গ্রিন’ এ জড়ো হওয়া অব্যাহত রেখেছে বলে জানায় বিবিসি।
পুরো কলম্বো জুড়ে সোমবার রাতের সংঘর্ষের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আাছে। হ্রদের মধ্যে বাস ফেলে দেয়া হয়েছে। যত্রতত্র জানালা ভাঙা বাস পড়ে আছে। টায়ারে এখনো আগুন জ্বলছে বা ধোঁয়া উড়ছে।
মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগের পর পরিবার নিয়ে কলম্বোর বাসভবন থেকে পালিয়ে উত্তরপূর্বের নগরী ত্রিনকোমালির নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক বিক্ষোভকারী ওই নৌ ঘাঁটির সামনে জড়ো হন।
পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ:
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া সরকার সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই লোকজনকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করার বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে।
সামরিক বাহিনী লোকজনকে আটক করার পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের হেফাজতে রাখতে পারবে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী মানুষের বাড়ি, গাড়িতেও তল্লাশি চালাতে পারবে বলে মঙ্গলবার সরকারি এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, “কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কাউকে গ্রেপ্তার করলে তাকে নিকটবর্তী থানায় নিতে হবে।”
আর সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা আটক ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের হেফাজতে রাখতে পারবে, তারপর নিকটবর্তী থানায় হস্তান্তর করতে হবে।
জরুরি এসব পদক্ষেপের অপব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিশ্লেষক।
গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী প্রতিবাদ তীব্র হয়ে ওঠার মুখে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কট পড়া শ্রীলঙ্কার এ অবস্থার জন্য বিরোধী দলগুলো দুই রাজাপাকসে ভাইকে দায়ী করে আসছেন।
শ্রীলঙ্কা সরকার এখন ৫১ বিলিয়ন দেনার ভারে ডুবে আছে। ঋণের কিস্তি হিসেবে দেশটির এই বছর ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা থাকলেও ওই অর্থও দেশটির হাতে নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতলেও তেমন সাহায্য পায়নি।