মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে প্রশিক্ষণে
অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের তিনি
এমন নির্দেশনা
দেন।
আগামী ২০ মে থেকে
বাড়ি বাড়ি গিয়ে
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েক হাজার
প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান একটি প্রক্রিয়া এবং বিষয়টি নতুন
করে একটি তালিকা
প্রণয়নের
মতো বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল ।
তিনি বলেন, “এটা সহজ নয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে, দ্বারে দ্বারে গিয়ে তথ্য
সংগ্রহ করতে হবে।… নতুনদের অন্তর্ভুক্ত
করার পাশাপাশি মৃতদের বাদ দিতে
হবে। এটাও কঠিন
কাজ,
শনাক্ত করে বাদ দিতে
হবে।”
কয়েক ধাপে কাজ চলবে
দেশজুড়ে। হালনাগাদে নতুন ভোটার
যুক্ত হবেন, মৃতদের বাদ দেওয়া হবে। সেই
সঙ্গে ভোটার স্থানান্তরের বিষয়ও রয়েছে। বাড়ি বাড়ি
গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা
ভোটারদের
এসব তথ্য
নেবেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন “সময় সময়ে
আপনাদের বিড়ম্বিত হতে হবে। আমিও এভাবে কাউকে কাউকে বিড়ম্বিত করেছি যখন বাসায়
এসে দরজা নক করে। পরে যখন
বুঝেছি, সর্বনাশ;
এটা তো দায়িত্ব।
“পরে
চা খেয়েছি; বসে গেছি। আপনারাও মাঝে মাঝে
এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। সেটাকে গায়ে মাখবেন
না। বিড়ম্বিত হলেও কাজ
চালিয়ে যাবেন।”
ভোটার তালিকা হালনাগাদে তিন সপ্তাহ
পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি
গিয়ে তথ্য সংগ্রহের
কাজ চলবে। এরপর
নির্ধারিত নিবন্ধন কেন্দ্রে ছবি তোলা, দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়া হবে।
২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি
বা তার আগে
যাদের জন্ম এমন
নাগরিকদের তথ্য নিবন্ধনের
জন্য সংগ্রহ করা হবে। নেওয়া হবে
১৫-১৭ বছর বয়সীদের তথ্যও। ১৮ বছর
হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন।
সিইসি বলেন, “শুদ্ধ
ও পরিপূর্ণ ভোটার তালিকা ছাড়া সঠিক
প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন সম্ভব
নয়। ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকে, আমি সত্য-মিথ্যা জানি না।
“বিভিন্ন
সময় বলেছে এক কোটি
ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ১ কোটি বৈধ
ভোটারকে বাদ দেওয়া
হয়েছে। এগুলো হয়ত কিছুটা
সত্য হতে পারে, সত্য নাও হতে
পারে।
“কিন্তু
আমাদের উপর যে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে
শুদ্ধ ও সিদ্ধভাবে
কাজটা করতে হবে।”
মহানগরের বহুতল ভবন এবং গেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করে তথ্য
সংগ্রহকারীদের সহজে কাজ
করার ব্যবস্থা করার তাগিদ
দেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার
বলেন, “প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এখান থেকে
প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন
নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজে
লাগতে হবে এবং
অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।”
ইসি সচিবের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে
চার নির্বাচন কমিশনারও বক্তব্য রাখেন।
কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের ক্ষোভ
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
তুলে
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
সিইসি ও অন্য নির্বাচন
কমিশনারের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের
আমন্ত্রণ, সার সংক্ষেপ উপস্থাপন ও তাতে নিজের
নাম না রাখায়
ক্ষুব্ধ
প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক এই আমলা।
তিনি জানান, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ
ইনস্টিটিউটের
(ইটিআই) মহাপরিচালক দলবলসহ গিয়ে তাকে
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানান। সোমবার রাত ১০টা
২ মিনিটে তাকে কর্মসূচির
সারাংশ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়।
সেখানে তিনি দেখতে পান, সেখানে তার নাম নেই। এর কয়েক মিনিট পর মহাপরিচালক
ফোন করে দুঃখ
প্রকাশ করেন এবং
এটা সংশোধন করেন।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আনিছুর
রহমান বলেন, “বর্তমান ইসি সচিব
এবং সাবেক সচিব বর্তমান
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন।
“তারা
বলেন, নির্বাচন কমিশনের
কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষ। আমি
সেটা ডিফার করি এবং
প্রথম থেকেই আমি ডিফার
করি। আমি ডিফার
করেই যাব। এটা
হওয়া উচিত না।”
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি কেন আসলাম? আমার তো আসা
উচিত ছিল না। আমি আগে থেকেই
বলেছি, ঘটা করে চারজনকে আনার দরকার
নাই।
“আমাদের
বক্তব্য মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেব থাকলেই যথেষ্ট। আর তো কারো থাকার দরকার নাই ঘটা
করে। দক্ষতার প্রমাণ কিন্তু এটা।”
এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, “কেউ অসন্তুষ্ট
হলে আমার কিছু
আসে যায় না। আমি আনিছুর রহমান ৩৪ বছর
যেভাবে কাজ করেছি, সেভাবেই বাকি ৫ বছরও করে যাব। এভাবেই করে যাব।
“কারও
চোখের দিকে তাকিয়ে
কিছু বলতে তার
কষ্ট লাগে না। চোখ বন্ধ করে
থাকলেও কষ্ট লাগে
না।”
ভোটার তালিকা তৈরির কাজে ইটিআই এর প্রশিক্ষণের চেয়ে
ভালো প্রশিক্ষণ হয় না উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের
দক্ষতা অর্জন করে কাজে
লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।
তবে প্রশিক্ষকদের মূল্যায়নের ফরম থাকলে
আরও ভালো হতো
বলে মত দেন
এ নির্বাচন কমিশনার।
বক্তব্যের শেষে আনিছুর রহমান বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমাকে না ডাকলে
ভালো হবে। আমি
আর এ ধরনের
প্রোগ্রামে থাকতে চাই না।”
পরে ওই অনুষ্ঠানেই ইসি সচিবালয়ের
সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার
দাওয়াতপত্রে
ইসি আনিছুর রহমানের নাম না থাকার ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ
করেন।
“নির্বাচন কমিশনার বলেছেন-দাওয়াতপত্রে
ওনার নামটি ছিল না। যে পেপারটি ওনার কাছে পৌঁছেছে, যিনি পাঠান না কেন
এজন্য প্রথমে প্রধান অতিথি ও সচিবালয়
সবার পক্ষ থেকে
দুঃখ প্রকাশ করছি।
“সিইসি, সব নির্বাচন কমিশনার, সব কর্মকর্তার কাছে চিঠিতে ওনার নাম
ছিল। কিন্তু ইটিআই মহাপরিচালক হোয়াটসঅ্যাপে যে দাওয়াতপত্র
তাকে পাঠিয়েছেন (আনিছুর রহমান)সেখানে স্যারের নাম ছিল
না।
“এটা
নিঃসন্দেহে মিসকন্ডাক্ট। এ নিয়ে
ডিজি সাহেবকে আমাদের যে অফিসিয়াল
ব্যবস্থা সেটি নেব।”
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল
আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার
আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন