রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জমিদারির দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করতেই এখানে এসেছিলেন। এরপর থেকেছেন বহুদিন। কুষ্টিয়ার মাটি ও নদীর প্রতি কবির মমতার কথা ফুটে উঠেছে তার বহু সৃষ্টিতে। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এখনও বহন করে চলেছে কবির বহু স্মৃতি।
কবির ব্যবহৃত বজরার মডেল
শিলাদহ কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী ইউনিয়নে অবস্থিত। দোতলা এ বাড়িটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একসময় এর দোতলার বারান্দায় বসলে একদিকে পদ্মা অন্যদিকে গড়াই নদী দেখা যেত। ধারণা করা হয়ে থাকে কবির বিখ্যাত কবিতা ‘ছোট নদী’ কুষ্টিয়ার গড়াই নদীকে কেন্দ্র করে লেখা। তুমি যদি কখনও কুষ্টিয়া বেড়াতে যাও তাহলে এ নদী দেখলে তোমারও সেই কথায় মনে হবে-
কবির ব্যবহৃত খাট
“আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।”
কবির ব্যবহৃত নৌকা
বিশাল আয়তন এ বাড়িটির মধ্যে দোতলা ভবনের পাশে আছে একটা বিশাল দীঘি। পুরো বাড়িটার আঙিনা জুড়ে আছে অনেক গাছপালা। এ গাছপালাগুলোর অবয়ব তাদের বয়সের সাক্ষী দিচ্ছে। এক একটা বৃক্ষ যেন দাঁড়িয়ে আছে এক একজন জাতিস্মরের ভূমিকায়। এ গাছগুলোর মধ্যে আম ও পাইন সংখ্যায় বেশি। পাশাপাশি আছে কাঁঠাল, নিম কাঠবাদামসহ আরও অনেক প্রজাতির গাছ।
কবির সময় ব্যবহৃত সিন্দুক
দীঘির দুই পাড়ে আছে দুটো শান বাঁধানো ঘাট। সেখানে বসে তুমি বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারো। অনেকেই এ শানের উপর শুয়ে তার শীতল পরশে শরীরের ক্লান্তি জুড়িয়ে নেন। আর দামাল ছেলেরা দলবেঁধে লাফিয়ে নেমে পড়ে গোসল করতে। আরও আছে অধুনালুপ্ত একটা পাতকুয়া।
কুঠিবাড়ির দেয়ালে টাঙানো ছবি
দোতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে রাখা আছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব। আছে ইতিহাসের সাক্ষী অনেক আলোকচিত্র। পালকি, সিন্দুক, খাটের পাশাপাশি আছে কবির ব্যবহৃত বজরা। এগুলো দেখলে তোমার মনে হবে তুমি যেন আজ থেকে শত বছর আগে কবির সময়ে চলে গেছো, যেখানে কবি-বাড়ির মেয়েরা পালকিতে করে নৌকা থেকে এ কুঠিবাড়িতে এসে নামছে। সিন্দুকে রাখা আছে তাদের ব্যবহৃত তৈজসপত্র। আর কবি খাটে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। কখনওবা বজরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন পদ্মার বুকে। ভ্রমণপিপাসু যে কারও কাছে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এক আরাধ্য বস্তু। কুঠিবাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে সবকিছুই তোমার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে।
কুঠিবাড়ির দেয়ালে টাঙানো ছবি
বর্তমানে কুঠিবাড়ির অনেক সংস্কার করা হয়েছে। কুঠিবাড়ির সামনে নির্মাণ করা হয়েছে একটা উঁচু মঞ্চ। আর ঢোকার মুখে মূল কুঠিবাড়ির বাইরে দেয়াল তুলে নির্মাণ করা হয়েছে একটা উঁচু প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কিনে প্রবেশ করতে হয়। আর একবারে বাইরে মূল রাস্তার পাশে আছে বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম কেনার দোকান। তার পেছনে আছে অতিথিদের থাকার জন্য ছোট ছোট বাংলো। এ বাংলোগুলোর পাশে সবসময়ই চলে ছোটখাটো মেলা। সেখানে নাগরদোলা থেকে শুরু করে আছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা। আর পাওয়া যায় অনেক রকমের মজার খাবার। তার মধ্যে কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী কুলফি এবং তিলের খাজা অন্যতম।
কুঠিবাড়ির বাইরে কুলফি মালাই বিক্রেতাদের সারি
তবে এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়। বাংলোগুলোর অবস্থান আরও একটা ছোট পুকুরকে কেন্দ্র করে ইংরেজি ইউ অক্ষরের আদলে। এ পুকুরের পাড়ে অনেক আবর্জনা পরিবেশটার সৌন্দর্য একেবারে মলিন করে দিয়েছে। এখানে সেখানে ছড়ানো রয়েছে পলিথিন। আমার মনে হয়েছে কর্তৃপক্ষ যদি কয়েকটা রাবিশ বিন দিয়ে দেন তাহলে আর দর্শনার্থীদের এখানে সেখানে ময়লা ফেলতে হতো না। দিনের শেষে বিনগুলো পরিষ্কার করে আবার নতুন বিন বসিয়ে দিলে খুব সহজেই এখানকার পরিবেশের সৌন্দর্য ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
কুঠিবাড়ির সামনে নবনির্মিত মঞ্চ
ঢাকা থেকে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে অনেকভাবেই যাওয়া যায়। কল্যাণপুরে কুষ্টিয়াগামী বাসগুলোর টিকেট কাউন্টার আছে। তুমি চাইলে আগে থেকেই অনলাইনেও টিকেট কিনে রাখতে পারো। এরপর বাসে উঠে বসলে একবারে চলে যাবে কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া শহরে আছে চমৎকার কিছু হোটেল। আর শহরের যে কোন রেস্তোরাঁয় তুমি খেয়ে নিতে পারো।
দীঘির শানবাঁধানো ঘাট
তারপর অটোতে করে শিলাইদহে আসতে পারো। দুই দিক দিয়ে কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহে যাওয়া যায়। গড়াই সেতু পার হয়ে অথবা ঘোড়ার ঘাট পার হয়ে। কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহে যাওয়ার এ রাস্তাগুলোর পরিবেশও অতি মনোরম। ছায়াঘেরা পাখিডাকা রাস্তাগুলো তোমাকে কবির সেই গানটার কথায় মনে করিয়ে দেবে –
সামনে থেকে কুঠিবাড়ি
“গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে।”
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |