মঙ্গলবার সকালে গণভবনে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেলিগেশনের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে আমাদের। সে লক্ষ্যে আমাদের বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার।”
বাংলাদেশকে একটি ‘আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি, আমরা বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন হালনাগাদ ও সহজ করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি বাংলাদেশের।”
আইন এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগের উন্নয়ন করছি। দেশজুড়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের জন্য আলাদাভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন সরকার প্রধান।
বাংলাদেশর তরুণ জনশক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলায় মনোযোগ দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়ার সুবিধা দেবে।
“বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্ব একই ধরনের মূল্যবোধ ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। দুই দেশের সার্বিক ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রসারে যার প্রতিফলন দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ ও অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পারে।”
বাংলাদেশ যথোপযুক্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বেড়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৭৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছিলো ৫৮০ কোটি ডলার।
শেখ হাসিনা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম আস্থাভাজন উন্নয়ন অংশীদার এবং এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উৎস এবং রপ্তানি বাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, আইসিটি, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল পণ্য, মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্য, গাড়ি, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ উৎপাদন, সিরামিক খাতসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরও বিনিয়োগ করে বিশেষ সুবিধা পেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই সফরে আপনারা নিশ্চয়ই চলমান মেগা প্রকল্পগুলো দেখেছেন, যার মাধ্যমে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি আমরা। আমাদের সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য দীর্ঘ-মেয়াদী প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল গ্রহণ করেছে যাকে টেকসই হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদেরা ও বিভিন্ন সংস্থা।”
বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কথা বৈঠকে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি উন্নত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষার কথাও বলেন।
“এ ধরনের একটি শক্তিশালী সম্ভবনা সামনে রেখে, আপনাদের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ করতে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো নীতি কাঠামোর নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”
সরকার প্রধান বলেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হওয়া ইউএস-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি টাস্কফোর্স দুই দেশের অংশীদারদের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
“একইভাবে, প্রস্তাবিত ইউএস-বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকনোমি টাস্কফোর্স দুই দেশের কোম্পানির জন্য টেকসই উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারে ভূমিকা রাখবে।”
তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত, আপনারা বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আপনাদের সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বোধ করবেন। তৈরি পোশাক, চামড়া, প্ল্যাস্টিক, পাট, আইসিটি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং আরও অনেক খাতে বাংলাদেশ এখন সর্বাধুনিক উৎপাদন কারখানা পরিচালনার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশ। এখন আমাদের সময় এবং আপনাদের জন্যও এদেশে বিনিয়োগ করে এসব সুবিধার সুযোগ নেওয়ার সময়।”
গত বছর ৬ এপ্রিল ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের যাত্রা শুরুর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরে আসায় ধন্যবাদ জানান।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড চেয়ার জে আর প্রাইর এবং বোর্ড সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস এক্সিকিউটিভরা সভায় বক্তব্য রাখেন।
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডার অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস।