খেলোয়াড়ী জীবনে ডোনাল্ড
নিজেই ছিলেন ‘রেড হট।’ একসময় দুনিয়া জুড়ে ব্যাটসম্যানদের
যম এই কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার যখন সার্টিফিকেট দিলেন, ইবাদত তাহলে দারুণভাবেই ঝালিয়ে
নিচ্ছেন নিজেকে।
মঙ্গলবার দুপুরে
বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে পাশের নেটেই তখন মুশফিকুর রহিমকে থ্রো-ডাউন খেলাচ্ছিলেন জেমি
সিডন্স। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং নিয়ে টুকটাক কিছু কাজও করছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং
কোচ। পাশাপাশি তিনি চোখ রাখছিলেন পাশের নেটে জয়ের দিকেও। শরিফুল ইসলামের বলে জয়ের একটি
স্ট্রেট ড্রাইভ দেখে ‘থামস আপ’ দেখিয়ে সিডন্স চিৎকার করে বললেন,
“গুড শট জয়, পারফেক্ট..।”
অনুশীলনে এ দিন ব্যস্ত
সময় কাটছিল সিডন্সের। মাঠের দুই প্রান্তের চার অনুশীলন নেটের পাশাপাশি ব্যাটিং ঝালিয়ে
নেওয়ার পালা চলছিল সেন্টার উইকেটেও। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর শ্রীলঙ্কা
সিরিজের প্রস্তুতিপর্বে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিংয়ে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। ব্যাটিং কোচকেও
তাই ছুটোছুটি করতে হচ্ছে এই নেট থেকে সেই নেটে, এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে। কারও
ব্যাক লিফট ঠিক করে দিচ্ছেন তো কারও হেড পজিশন। টুকটাক নানা কিছু নিয়ে কাজ করলেন তিনি
প্রায় সবাইকে নিয়েই।
জেমি সিডন্স ও রঙ্গনা হেরাথেরর সঙ্গে নেটে রিভার্স সুইপ খেলার অনুশীলন তামিম ইকবালের।
তবে তামিম ইকবালের
সঙ্গে তার একটি সেশন নজর কাড়ল আলাদা করেই। সেন্টার উইকেটে লম্বা সময় ব্যাটিং করে তামিম
চলে এলেন প্রেস বক্স প্রান্তের একটি নেটে। সেশন শুরুর আগে তিনি খানিকক্ষণ কথা বললেন
সিডন্সের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান আরও বেশি সময় ধরে কথা বললেন
স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে। সেই আলোচনার বিষয়বস্তু পরিষ্কার হলো একটু পরই।
নেটেই কাছ থেকে হেরাথ
থ্রো-ডাউন করতে থাকলেন, তামিম সমানে খেলতে থাকলেন রিভার্স সুইপ! সিডন্স গভীর মনোযোগে
দেখতে থাকলেন তামিমের পা ও মাথার অবস্থান ও ব্যাট ঠিক জায়গা থেকে নেমে আসছে কিনা। লঙ্কানদের
বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অবশ্যই লঙ্কান স্পিন আক্রমণ। তামিমের
বিশেষ অনুশীলনেই ষ্পষ্ট, স্পিনারদের পাল্টা আক্রমণের একটি অস্ত্র শাণিত করে নিচ্ছেন
তিনি।
এই অনুশীলনে হেরাথকে
সম্পৃক্ত রাখার কারণ হতে পারে, স্পিনার হিসেবে তিনি ভালো জানবেন, এই অনুশীলনের জন্য
বলটা ঠিক কোন জায়গায় রাখতে হবে। লঙ্কান স্পিনারদের মনস্তত্ত্বও তার ভালো বোঝার কথা।
সিডন্স পাশ থেকে
তার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছিলেন। তামিমকে শট খেলার টিপস যেমন দিচ্ছিলেন, তেমনি বারবার
বলে দিচ্ছিলেন, ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ কম থাকলেই এই শট খেলতে, নইলে ঝুঁকির
পথে না হাঁটতে। তামিম হেসে বলছিলেন রিভার্স সুইপে দারুণ দক্ষ জিম্বাবুয়ের গ্রেট অ্যান্ডি
ফ্লাওয়ারের কথা, “অ্যান্ডি একটা কথা অনেক বলতেন যে,
এই শট খেলে সফল হলে দারুণ কার্যকর, কিন্তু ঠিকমতো খেলতে না পারলেই বাজে লাগে দেখতে…।”
ওই সেশনের শেষ নয়
শুধু রিভার্স সুইপেই। পরে স্লগ সুইপ অনুশীলনও চলল অনেকক্ষণ। বোঝা গেল, লঙ্কান স্পিনারদের
জন্য আটঘাট বেঁধেই প্রস্তুত হচ্ছেন তামিম।
সিডন্স অবশ্য অনুশীলন
শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, এসব অনুশীলন শুধু সামনের সিরিজ নয়, সামনের
কয়েক বছরের জন্য।
“আমরা চাই প্রতিটি ক্রিকেটারই শিখতে
থাকুক। নতুন পথ খুঁজতে থাকুক। তামিমও সেখানে আলাদা নয়। রান করার নতুন পথ খোঁজা হচ্ছে।
সে জানে, আজকে যা করেছে তা ম্যাচে কাজে লাগবে। সামনে তিন-চার বছরে ভালো ক্রিকেট খেলার
দিকে তাকিয়ে আছে সে।”