বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের
প্রশ্নে বলেন, তিন প্রতিষ্ঠানই বিভিন্নভাবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী
বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে যে সংগঠন বিবৃতি দেয়, কিন্তু পেট্রল বোমা মেরে শত
শত লোককে পুড়িয়ে মারার পর কিছু বলে না, তখন সেই সংগঠন কি পক্ষপাতদুষ্ট নয়?
”ফিলিস্তিনি শিশুদের ঢিল ছোড়ার বিপরীতে ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে
ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে, তখন তারা বিবৃতি দেয় না। আমরা অন্যান্য দেশে পান থেকে চুন
খসলে বিবৃতি দিতে দেখি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই।
কিন্তু ইসরায়েলের বিষয়ে কিছু বলে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার বিশ্বাসযোগ্যতা
হারিয়েছে।”
আরএসএফের ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে’
বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের পেছনের রাখার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে নারী
সাংবাদিক খবর পড়ার কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আফগানিস্তানে টেলিভিশন থেকে
সমস্ত নারী সাংবাদিকদের বিদায় নিতে হয়েছে।
”যেই দেশে সাংবাদিকতাই নাই, যে দেশে সাংবাদিকরা
কাজ করতে পারেন না, সেই দেশের অবস্থান বাংলাদেশের উপরে দিয়ে তারাইতো প্রমাণ করেছে,
আমার বলার প্রয়োজন নেই, তারাই প্রমাণ করেছে, তাদের রিপোর্ট বিদ্বেষপ্রসূত।”
টিআইবির বিষয়ে তিনি বলেন, “টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠানের
প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি আমি মনে করি, তারা যখন দায়িত্বশীলের ভূমিকা
নিয়ে পরামর্শ দেন, সেটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। সে কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
“সেই সংগঠন যখন রাজনৈতিক দলের মতো বিবৃতি
দেওয়া শুরু করে, তখনতো সেই সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। রাজনৈতিক দলের বিবৃতি আর
টিআইবির বিবৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য রইল না। বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি তার বিশ্বাসযোগ্যতা
হারিয়েছে।”
করোনাভাইরাসের টিকায় দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির
সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি
বলেন, “এটি কোনো গবেষণা নয়, এটি চটজলদি একটি বক্তব্য দেওয়া। এটা সেই প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ
করেছে।”
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফ
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে।
সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৬৩ স্কোর
নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৬২তম।
বিশ্বজুড়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক স্বাধীন
এই সংগঠনটির ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম, স্কোর ছিল ৫০ দশমিক ২৯।
তার আগের বছর অবস্থান ছিল ১৫১তম।
এবারের সূচকে নাজুক হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত
ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের উপরে। ভারতের অবস্থান ১৫০ (স্কোর ৪১), পাকিস্তানের
অবস্থান ১৫৭ (স্কোর ৩৭)।
৩৮ দশমিক ২৭ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তানও বাংলাদেশের
চেয়ে এগিয়ে আছে। তাদের অবস্থান ১৫৬। তালিকায় ৩৩তম হয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভুটান।
বাংলাদেশ আফগানিস্তানের পেছনে পড়ার কথা উল্লেখ
করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আরও ২০০ ধাপ নামিয়ে দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না।
”যারা আফগানিস্তানের পরে বাংলাদেশকে দেখায়,
তাদের রিপোর্ট কতটা ক্রেডিবল সেটা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন নাই। তারা কেন
করছে, সেটা সহজেই অনুমেয়।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলোদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল
প্লাটফর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরার গুজবে দেশে বহু নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার
হয়েছে, জীবিত ব্যক্তি মৃত বলে প্রচার হয়েছে, গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্টের
অপচেষ্টা হয়েছে।
”এই মাধ্যমে যাতে কারও চরিত্রহনন, গুজব রটানো, কিংবা রাষ্ট্র,
প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির স্বাধীনতা বা নিরাপত্তাহানি না ঘটে সেজন্য আপামর মানুষের জন্য
এ আইন, কোনোভাবেই শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়।”
সাংবাদিকদের অধিকতর
সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মী আইন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এই
আইনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়তো আছে, সেগুলো সংশোধন
ও পরিমার্জন করে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে।”
ওকাব আহ্বায়ক বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি কাদির
কল্লোলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্য সচিব জার্মান প্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি
নজরুল ইসলাম মিঠু বক্তব্য দেন।