প্রায় আড়াই মাস ধরে প্রতিবেশী ইউক্রেইনে চলা রাশিয়ার সামরিক অভিযান বিভিন্ন কারণে বারবার থমকে গেলেও হালের ভৌগোলিক বাস্তবতায় সেখানে রুশ বাহিনীর অগ্রগতির চিত্রই ফুটে উঠছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পূর্ব ইউক্রেইনে লড়াইরত তাদের বাহিনীগুলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের মধ্যবর্তী সীমান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।
ইউক্রেইনের রুশভাষী এই প্রদেশে দুটিতে মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ৮ বছর ধরে দেশটির সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, রুশ মন্ত্রণালয়ে দাবি সঠিক হলে দনবাস নামে পরিচিত অঞ্চলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ শিগগিরই রাশিয়ার হাতে চলে যাচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেইন অভিযান শুরুর আগে দনবাসের মাত্র এক তৃতীয়াংশ রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আগ্রাসন শুরু পর রাশিয়া প্রথমে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ দখলে অধিক মনযোগ দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার পর তারা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে মনযোগ দেয়।
ইউক্রেইনের ‘পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ’ রাশিয়ার দখলে
দনবাসে রুশ বাহিনীকে সফল বলাই যায়। তা সত্ত্বেও যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো একটি অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল হেইন্স মঙ্গলবার দেশটির একটি সেনেট কমিটির শুনানিতে বলেন, ‘‘পুতিন এখনো দনবাসকে ছাড়িয়ে তার লক্ষ্য পূরণে ইচ্ছুক। কিন্তু তাকে সেখানে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাশিয়ার বর্তমান সামরিক সক্ষমতার মধ্যে একটি অসামঞ্জস্য অবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।”
মার্কিন সেনেটের শুনানিতে কথা বলছেন এভ্রিল হেইন্স এবং স্কট বেরিয়ার। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘খুব সম্ভবত’ ইউক্রেইনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন দুর্বল হওয়ার দিন গুণছেন বলেও মনে করেন ওই কর্মকর্তার।
বলেন, হয়তো পুতিন আশা করছেন, মুদ্রাস্ফ্রীতি, খাদ্য সংকট এবং জ্বালানির দামের দ্রুত ঊর্ধ্বগতির কারণে পশ্চিমারা খুব বেশিদিন ইউক্রেইনে সমর্থন দেবে না।
তবে এটাও ঠিক যে, যুদ্ধ চলতে থাকলে পুতিন যেকোনো সময় ‘আরো কঠোর ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারেন। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হচ্ছে, যদি পুতিন রাশিয়ার ‘অস্তিত্বের উপর কোনো হুমকি’ আসছে বলে মনে করেন কেবল তখনই তিনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন।
একই শুনানিতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক স্কট বেরিয়ার বলেন, যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেইন এখন ‘খানিকটা হলেও অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে’।
যুদ্ধের সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করতে গেলে বলা যায়, একদিকে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেইন দখল করে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেইন তাদের উত্তরপূর্বের খারকিভ অঞ্চলের চারটি এলাকা পুনঃদখল করার দাবি করেছে।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেইনের সাফল্য ক্রমাগত রুশ বাহিনীকে খারকিভ থেকে হটিয়ে দিচ্ছে।
আগ্রাসনের শুরুর দিকেই একের পর এক গোলার আঘাতে রুশ বাহিনী খারকিভ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।