ক্যাটাগরি

‘ফার্মেন্টেড’ মানেই ‘প্রোবায়োটিক’ নয়

ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে গাঁজানো বা ‘ফারমেন্টেড’ খাবার তৈরি
করা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই মাথায় আসে এসব খাবার ‘প্রোবায়োটিকস’য়ে পূর্ণ।

তবে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফর্মেশন কাউন্সিল (আইএফআইসি)’র
সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, সব ‘ফার্মেন্টেড’ বা গাঁজানো পদ্ধতিতে তৈরি করা খাবারে ‘প্রোবায়োটিক’
থাকে না।

আইএফআইসি’র ‘রিসার্চ অ্যান্ড নিউট্রিশন কমিউনিকেশন’য়ের
পরিচালক ড. আলি ওয়েবস্টার ওয়েলঅ্যান্ডগুড ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন,
“গাঁজানো পদ্ধতিতে খাবার তৈরি হয় মূলত ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে। এমন সব খাবারেই ‘প্রোবায়োটিক’
থাকবে, সেটা মনে করাও ভুল নয়।”

তিনি আরও বলেন, “তবে বাস্তবে তা হয় না। একটি খাবারকে ‘প্রোবায়োটিক’য়ের
উৎস হিসেবে গন্য করার জন্য তাতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় জীবিত ব্যাক্টেরিয়া থাকতে হয়।
আর পুরো গাঁজানো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ওই খাবারে যে ব্যাক্টেরিয়া অবশিষ্ট থাকবে তা
উপকারী কি-না সেটাও দেখার বিষয়। সব ‘ফার্মেন্টেড’ খাবার এই বিবেচনায় উত্তীর্ণ হয় না।”

“আবার ‘প্রোবায়োটিক’ না থাকলেই যে ওই খাবারের উপকারিতা
নেই ব্যাপারটা এমনও নয়। ‘প্রোবায়োটিক’ ছাড়াও তা অন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে।”

গাঁজানো পদ্ধতির
খাবার আর প্রোবায়োটিক’য়ের মধ্যে পার্থক্য

পুষ্টিবিদ ড. ওয়েবস্টার বলেন, “বেশিরভাগেরই ধারণা গাঁজানো
খাবার আর ‘প্রোবায়োটিক’ একই জিনিস। তবে সেটা ঠিক নয়।”

গাঁজানো খাবার তৈরিতে ব্যবহার হয় ইস্ট ও জীবিত ব্যাক্টেরিয়া,
যার মাধ্যমে একটি খাবার পরিণত হয় ভিন্ন একটি খাবারে। এই ইস্ট আর জীবিত ব্যাক্টেরিয়ার
সমষ্টি হল ‘প্রোবায়োটিক।

হজমতন্ত্রে বসবাস করা ‘গাট ফ্লোরা’র উন্নতির জন্য ‘প্রোবায়োটিক’
আছে এমন খাবার ও ‘সাপ্লিমেন্ট’য়ের সাহায্য নিতে হয়।

ড. ওয়েবস্টার বলেন, “তবে ‘প্রোবায়োটিক’ ঠিক কীভাবে অন্ত্রের
উপকার করে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে, ফলে নিশ্চিতভাবে আমরা জানি না। যে কারণে ‘প্রোবায়োটিক’
আর গাঁজানো খাবারের মধ্যকার ভুল ধারণা বাড়ে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ান মেডিকাল’ হাসপাতালের চিকিৎসক নাতাশা
ভূঁইয়া ওয়েলঅ্যান্ডগুড’কে বলেন, “আমরা জানি ‘প্রোবায়োটিক’ উপকারী, তাই গাঁজানো খাবারও
আমাদের জন্য উপকারী হবে সেটাও ধরে নেই। তবে তাকে সত্য দাবী করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ
কিন্তু নেই। আবার বিজ্ঞান আজও জানে না গাঁজানো খাবার কীভাবে শরীরের উপকার করে, হতে
পারে তা ‘প্রোবায়োটিক’।”

“আবার নাও হতে পারে। কিছু গাঁজানো খাবারের প্রধান উপকরণে
ভোজ্য আঁশ থাকে এবং সেগুলো ‘প্রোবায়োটিক’ হিসেবে কাজ করে। এই ভোজ্য আঁশ হল অন্ত্রের
উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার খাবার যা অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।”

ডা. ওয়েবস্টার বলছেন, ‘প্রোবায়োটিক’ বাদ দিলেও গাঁজানো
খাবারে উপকারিতা কম নয়। টক দই, ঘোল ইত্যাদিতে আছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন
ধরনের অসংখ্য ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। মুখে ভিন্ন এক স্বাদ দেয় এই
খাবারগুলো। আবার অনেক দেশে এই খাবারগুলো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। তাই খাদ্যাভ্যাসে
তাদের অবস্থান পোক্ত।” 

যে গাঁজানো
খাবারে প্রোবায়োটিক আছে

ওয়েবস্টার বলেন, “দুগ্ধজাত খাবার যেমন ঘোল ও টকদইতে বেশি
মাত্রায় অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়া সরবরাহ করে। গরম না করা ‘খিমচি’, ‘সাওয়ারক্রাউট,
‘মিজো’ ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমাণে উপকারী প্রোবায়োটিক মেলে। তবে সমস্যা হল বাজারে এদের
যে ধরনগুলো পাওয়া যায় তাদের মধ্য অনেকগুলোই দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ‘হিট-ট্রিটমেন্ট’
প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। ফলে তাদের ‘প্রোবায়োটিক’ ধ্বংস হয়ে যায়।”

যে গাঁজানো
খাবারে প্রোবায়োটিক নেই

ড. ওয়েবস্টার বলেন, “বিয়ার’, ‘ওয়াইন’, মদ গাঁজানো পদ্ধতিতে
তৈরি হয়। কিন্তু এতে ব্যবহার করা ব্যাক্টেরিয়া পরে পানীয় থেকে পরিশোধন করে নেওয়া হয়,
ফলে তাতে ‘প্রোবায়োটিক’ থাকে না। ‘সাওয়ারডো ব্রেড’, কৌটাজাত ‘সাওয়ারক্রাউট’ ও অন্যানা
কৌটাজাত গাঁজানো সবজি, খমবুচা ইত্যাদির বেশিরভাগই ‘হিট-ট্রিটমেন্ট’ পায়। ফলে অন্যান্য
পুষ্টি উপাদান থাকলেও ‘প্রোবায়োটিক’ আর থাকে না।”

প্রোবায়োটিক
গ্রহণের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস

“এই উপাদানের কোনো নির্দিষ্ট দৈনিক চাহিদার মাত্রা নেই।
‘প্রোবায়োটিক’য়ের উপকার পেতে হলে তা নিয়মিত খেতে হবে। কালেভদ্রে একটু টক দই খেয়ে অন্ত্রে
কোনো উপকার পাওয়া যাবে না,” বলেন ড. ওয়েবস্টার।

আবার নিয়মিত খেলেই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের যুগান্তকারী কোনো
পরিবর্তন আসবে এমনটা আশা করাও ঠিক না, কারণ এর উপকারিতা নিয়ে বিজ্ঞান এখনও সন্দিহান।

তাই রকমারি খাবার দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজার রাখাই
হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও পড়ুন


দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার
 

শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে
 

মলত্যাগের রুটিন বজায় রাখার উপায়