অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “কিছু সময়ের জন্য হলেও ছেলেমেয়েরা যাতে হাত পা ছুড়ে খেলতে পারে, সেটা আপনাদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর প্রতিটা এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন।”
বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১৩-২০২১ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা এখন তো সব ফ্লাটে বাস করে এবং ফ্লাটে বাস করে করে সেগুলো সেই ফার্মের মুরগির মতনই হয়ে যাচ্ছে।
“হাঁটাচলা…আর এখন তো মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ, আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা আসলে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবেও সুস্থতার লক্ষণ না।”
তবে ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা যে কম, সে কথা তুলে ধরে বিষয়টিকে ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি।
“প্রত্যেকটা অভিভাবক যদি একটু আন্তরিক হন এবং নিজের ছেলে মেয়েকে নিয়ে একটু খেলাধুলা…খেলাধুলা, দৌড়-ঝাপের মধ্য দিয়ে শারীরিক, মানসিক সবকিছু বিকশিত হবার সুযোগ পায় সেটাই আমি বলব। বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা তাহলে অন্যদিকে যাবে না।’”
সারা দেশে নির্মাণাধীন খেলার মাঠের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব সময় ক্রীড়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই এবং ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি করছি।
“সেই সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সারা দেশে, প্রতি উপজেলায় খেলার মাঠ। সেই খেলার মাঠগুলো খুব বড় স্টেডিয়াম না, ছোট করে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ আমি নাম দিয়েছি।”
এসব মাঠের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই পর্যন্ত ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আরও ১৭১টি উপজেলায় ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
“তবে আপনাদের এই ব্যাপারে যথেষ্ট সময় দেওয়া হচ্ছে। যাতে আর সময় না নেওয়া হয়, সেটা দেখতে হবে।”
কক্সবাজার ও সিলেটে স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতি জেলায় যে স্টেডিয়ামগুলো সেগুলোকে ক্রিকেট স্টেডিয়াম বললে ওটা ব্যবহার হয় না। সেই কারণে এই স্টেডিয়ামগুলোতে সকল খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
“এই স্টেডিয়ামগুলো যদি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে শুধু ক্রিকেট না, সব ধরনের খেলাধুলা সেখানে চলবে। নইলে ওটা পড়ে থাকে।”
খেলাধুলার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে গ্রামীণ খেলাগুলো সংরক্ষণের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যেগুলোর খুব খরচও লাগে না। কিন্তু তারা নিজেরা খেলবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা- এই প্রতিযোগিতাটা যাতে ব্যাপকভাবে চলে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।
“আমরা এই ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং এইক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সেটাও আমরা করে দিচ্ছি।”
ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মেয়েরা, তারা কিন্তু পিছিয়ে নেই। মেয়েদের খেলাধুলা যখন প্রথম ১৯৯৬ সালে শুরু করি তখন কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা এসেছিল। যা হোক, সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছি এখন।
“আমাদের ক্রিকেট, ফুটবল সব ক্ষেত্রেই দেখি আমাদের নারীরা অনেক পারদর্শিতা দেখাতে পারছে। তাদেরকে একটু বেশি করে সুযোগ দিতে হবে এবং আরও উৎসাহিত করতে হবে।”
ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারণ, তারাই সব থেকে বেশি সম্মান আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। তারা কিন্তু… যথেষ্ট পারদর্শিতা তারা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।”
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মেজবাহ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।