এতদিন তিনি কারা তত্ত্বাবধায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার বিকালে জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে সেখানেই তার মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।
মুক্তি পেলেও চিকিৎসার জন্য এখনও তাকে হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকের সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আব্দুস সেলিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন থেকে উনি (সম্রাট) আমাদের অধীনে নেই; তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অধীনে।”
সম্রাটের বিরুদ্ধে চারটি মামলার মধ্যে তিনটিতে আগেই তার জামিন হয়েছিল। সর্বশেষ বুধবার অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তির পথ খোলে।
কারা কর্মকর্তা সেলিম বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ব্লকের দোতলায় সম্রাটের জামিননামা নিয়ে যান। ১৫ মিনিট পর ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ উনি হাসপাতালেই ভর্তি থাকবেন। কাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে সম্রাটের মুক্তির খবরে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় জমান আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্রাট ভাই আরও কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকবেন।”
সম্রাটসহ যুবলীগের ৪ নেতা লাপাত্তা
যুবলীগের সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
যুবলীগের সম্রাট ও আরমান কুমিল্লায় গ্রেপ্তার
যুবলীগের সম্রাটের অফিসে অস্ত্র, ইয়াবা, ক্যাঙ্গারুর চামড়া
কুমিল্লায় আত্মীয়র বাসায় সম্রাট ‘লুকিয়ে ছিলেন ৩ দিন ধরে’
সম্রাট ও আরমানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাস করে সাজা
আদালতে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট (ফাইল ছবি)
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।
আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব।
সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল সম্রাটকে জামিন দেয় আদালত।
সবশেষে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান বুধবার অবৈধ সম্পদের মামলাতেও সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। আর তাতেই তার মুক্তির বাধা কাটে।
এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক আগামী ৯ জুন নতুন তারিখ ধার্য করে দেন।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এখন মামলাটি অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায়।
কাকরাইলের ৯ তলা ভবনজুড়ে সম্রাটের রাজত্ব
‘অসুস্থ’ সম্রাট কারাগার থেকে হাসপাতালে
সম্রাটের রিমান্ড শুনানিতে আলোচনায় মদ, মাংস