ক্যাটাগরি

শক্তি হারিয়ে ‘আসানি’ পরিণত ঘূর্ণিঝড়ে, যাচ্ছে অন্ধ্রে

অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাদা জেলায় বুধবার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টির খবর এসেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। আগের দিন গতিপথ পরিবর্তন করা আসানি কাকিনাদা জেলায় উপকূল দিয়েই স্থলভাগ স্পর্শ করতে পারে।

এরপর ফের দিক পরিবর্তন করে এ ঝড় বুধবার সন্ধ্যার দিকে বিশাখাপত্তমের কাছ দিয়ে সাগরে বেরিয়ে আসতে পারে। এখনকার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বৃষ্টি ঝরিয়ে আসানি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ।  

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুর, কৃষ্ণা, বিশাখাপত্তম, পশ্চিম ও পূর্ব গোদাবরী জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। সেখানে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

টাইমস অব ইনডিয়া জানিয়েছে, কিনাদা-উপ্পাদা বিচ রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের বোর্ড অফ ইন্টারমিডিয়েট এডুকেশন বুধবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে।

অন্ধ্র উপকূলের জেলাগুলিতে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা, সূর্যপেট, ভদ্রদ্রি কোথাগুডেম, খাম্মাম এবং মুলুগু জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার মঙ্গলবার দুপুরে আসানির যে সম্ভাব্য গতিপথ দেখিয়েছিল, তাতে ঝড়টি অন্ধ্র আর ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলের দক্ষিণ দিকে এগিয়ে দুর্বল হতে হতে সাগরেই হারিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের দেখানো সম্ভাব্য গতিপথে আসানির মতি পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

বুধবার সকাল ৬টায় আসানির অবস্থানের ভিত্তিতে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা ঠিক হলে দুপুরের আগেই অন্ধ্রের গুন্টুর জেলার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে আসানির কেন্দ্রভাগ। বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে হতে ধীরে ধীরে দিক বদল করতে পারে এ ঝর। এরপর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ফের বেরিয়ে আসতে পারে সাগরে।      

আসানির প্রভাবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।

আবহওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শুক্রবার দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা ঘনীভূত হয়ে শনিবার নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেয়। এরপর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে রোববার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এটি ‘আসানি’ নাম পায়।

 

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। আসানি নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলা ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।

বুধবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

মঙ্গলবার সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আর ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রিতে।

পুরনো খবর:

অস্থিরমতি আসানি উপকূল পেরোবে?
 

স্থলে আর ‘উঠছে না আসানি’, ঝরাচ্ছে বৃষ্টি
 

প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি কোন পথে যাচ্ছে?
 

বৃষ্টিতে শার্শায় বোরো ধানের ‘ব্যাপক ক্ষতি’
 

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ এখনও দূরে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাংলাদেশ
 

সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’, ৬ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ
 

বদলাচ্ছে তাপদাহের মানচিত্র