কাম্প নউয়ে লা লিগার ম্যাচে মঙ্গলবার রাতে ৩-১ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। লিগে দুই ম্যাচ পর সেল্তার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল তারা।
বার্সাকে পেলে যেন বেরিয়ে আসে সেল্তার সেরাটা। গতবার কাম্প নউয়ে জিতেছিল ২-১ ব্যবধান। চলতি আসরে ঘরের মাঠে ড্র করে ৩-৩ ব্যবধানে। মঙ্গলবার মুখোমুখি হওয়ার আগে সবশেষ ছয় ম্যাচে কাতালান ক্লাবটির বিপক্ষে তাদের জয়-পরাজয়-ড্র দুটি করে।
এই ম্যাচেও প্রথম সুযোগটা পায় তারাই। চতুর্দশ মিনিটে ইয়াগো আসপাসের সামনে ছিলেন কেবল বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। সেল্তা অধিনায়ক শট নেওয়ার আগেই পেছন থেকে এসে চমৎকার চ্যালেঞ্জে বিপদমুক্ত করেন রোনালদ আরাহো।
আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ, তবে গোলের নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না কেউই। এর মধ্যেই দেম্বেলে ও মেমফিসের নৈপুণ্যে ৩০তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।
গোলে দারুণ অবদান দেম্বেলের। মাঝমাঠে বল পেয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে আসা দুই জনকে পায়ের কারিকুরিতে পেছনে ফেলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যান ডি বক্সে। নিজে শট না নিয়ে চমৎকার কাট ব্যাকে খুঁজে নেন অরক্ষিত মেমফিসকে। তার শটে ঝাঁপিয়ে গ্লাভস ছোয়ালেও জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি সেল্তা গোলরক্ষক।
৩৬তম মিনিটে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল সেল্তা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড চিয়াগো গালহার্দোর বাঁকানো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন। কর্নার থেকে গালহার্দোর হেড অনায়াসেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যবধান ধরে রাখেন এই জার্মান গোলরক্ষক।
পাঁচ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে বার্সেলোনা। ডি বক্স থেকে মেমফিসের ক্রসে ততটা জোর ছিল না। তবে আগেই মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ঠিক মতো শট নিতে পারেননি সেল্তার মেক্সিকান ডিফেন্ডার নেস্তর আরাউহো। তার কাছাকাছিই থাকা অবামেয়াংয়েও খুব একটা জোরে শট নিতে পারেননি, তবে সেটা কাছের পোস্ট দিয়ে জালে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই স্কোর লাইন ৩-০ করে ফেলে বার্সেলোনা। ৪৮তম মিনিটের এই গোলেও দারুণ অবদান দেম্বেলের। ডানদিক থেকে বল পায়ে ডি বক্সে ঢুকে খুঁজে নেন অরক্ষিত অবামেয়াংকে। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে বাকিটা সারেন গ্যাবনের এই ফরোয়ার্ড।
বার্সেলোনার ডিফেন্ডারদের দৃষ্টিকটু ভুলে দুই মিনিট পরেই ব্যবধান কমান আসপাস। সফরকারীরা আক্রমণে ওঠার সময় বিস্ময়করভাবে তাকে পাহারায় রাখেনি স্বাগিতকদের কেউই। গোল মুখে গালহার্দোর পাস পেয়ে অনায়াসে বাকিটা সারেন আসপাস। খুব বেশি কিছু করার ছিল না টের স্টেগেনের।
এই গোলে বড় একটা ঝাঁকুনিই খায় বার্সলোনা। রক্ষণ নিয়ে বাড়তি ভাবনায় প্রায় সবাই নেমে আসে নিচে। তবে পরিস্থিতি বদলি যায় ৫৮তম মিনিটে সেল্তা ১০ জনের দলে পরিণত হলে। স্বাগতিকদের প্রতি আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় নিজেদের ডি বক্সের ঠিক সামনে মেমফিসকে ফাউল করে ঠেকিয়ে সরাসরি লালকার্ড দেখেন মুরিয়ো।
বদলি নামার স্রেফ ১৩ মিনিট পরই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
একই সঙ্গে বলে হেড করার চেষ্টায় মাথায় আঘাত পান গাভি ও রোনালদ আরাহো। শুরুতে মনে হয়নি তেমন কিছু হয়েছে উরুগুয়ের ডিফেন্ডারের। তবে একটু পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত এগিয়ে যান বার্সেলোনার চিকিৎসকরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে মাঠের বাইরে, পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আরাহোকে।
ফের খেলা শুরু হতে না হতে রক্ষণের আরেকটি গোল হজম করতে বসেছিল বার্সেলোনা। ৬৯তম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট নিতে দেরি করে ফেলেন আসপাস। শেষে শট না দিয়ে ডি বক্সে খুঁজে নেন ব্রাইস মেন্দেসকে। তিনিও শট নেননি, ততক্ষণে ডি বক্সে চলে আসেন বার্সেলোনার অনেকেই। হাতছাড়া হয়ে যায় ম্যাচ আরও জমিয়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ।
৭৭তম মিনিটে বল জালে পাঠান রিকি পুস। তবে অফসাইডের জন্য গোল মেলেনি।
বদলি নামা আনসু ফাতি ৮৮তম মিনিটে একটুর জন্য জালের দেখা পাননি। অবামেয়াংকে যেভাবে পাস দিয়েছিলেন, অনেকটা সেভাবেই তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে খুঁজে নিয়েছিলেন দেম্বেলে। কিন্তু ফাতির শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
১১ মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ দিকে আবার সুযোগ পেয়েছিলেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু এবার চ্যালেঞ্জের মুখে শটই নিতে পারেননি।
চার দলের স্প্যানিশ সুপার কাপে খেলতে লিগে রানার্সআপ হতেই হবে বার্সেলোনাকে। এই জয়ে সেই পথে বেশ এগিয়ে গেল তারা। ৩৬ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে দৃঢ় করল নিজেদের অবস্থান। রানার্সআপ হওয়ার দৌড়ে থাকা সেভিয়া (৬৫) ও আতলেতিকো মাদ্রিদের (৬৪) সঙ্গে বাড়িয়ে নিল ব্যবধান। এই দুই দল একটি করে ম্যাচ কম খেলেছে।
৩৫ ম্যাচে ৮১ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি শীর্ষে আগেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলা রিয়াল মাদ্রিদ।