পাশাপাশি রাইস
ব্র্যান, সানফ্লাওয়ার ও ক্যানোলাসহ যে কোনো ধরনের ভোজ্যতেল করমুক্তভাবে আমদানির
সুযোগ দেওয়ার পক্ষেও বলেছেন তিনি।
মহামারীর মধ্যে
ভোজ্য তেলের বাজারে যে অস্থিরতার শুরু হয়েছিল, তিন মাস আগে ইউক্রেইন যুদ্ধের পর তা
আরও চড়তে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে
প্রথমে ভোজ্য তেল পরিশোধন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশসহ মোট ২০
শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর আমদানি
পর্যায়েও ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরপরও এই মাসের শুরুতে
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বেড়েছে।
ভোজ্যতেলের ভ্যাট আসলে কতটা কমছে?
ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমলো ১০%
এই পরিস্থিতিতে
সয়াবিন আমদানিতে বাকি ৫ শতাংশ ভ্যাটও তুলে নিতে সরকারকে সুপারিশ করলেন এফবিসিসিআই
সভাপতি।
ভোজ্য তেলের
আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বুধবার
মতবিনিময় সভায় বক্তব্যে জসিম বলেন, “বিশ্ব বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের বাজারে ভোজ্য তেল
নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়ার জন্য বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে যে
৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, তাও তুলে দেওয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশে ভোজ্য
তেলের মধ্যে সয়াবিনের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি। আর এর প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
সয়াবিনের পাশাপাশি আমদানি করা পাম, সূর্যমুখী তেলের দামও বেড়েছে। এমনকি দেশে
উৎপাদিত সরিষা তেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
জসিম বলেন, “আর ফিনিশড গুডসের আমদানি
উৎসাহিত করার রাইসব্র্যান, সানফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা অয়েলসহ সব ধরনের ভোজ্য তেল বিনা
শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে যে কেউ তেল আমদানির সুযোগ পারে এবং বাজারে
যোগান বাড়বে। এতে বাজারও স্বাভাবিক থাকবে বলে আমি মনে করি।”
ভোজ্য তেলের
খোলা বিক্রি বন্ধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “চলমান পরিস্থিতিতে বোতলের গায়ে মূল্য লেখা থাকার কারণে
খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা তেল হিসাবে ২২০ টাকা লিটার বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে যাতে এই
রকম পরিস্থিতির আর উদ্ভব না হওয়ার জন্য খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ।”
মতিঝিলে
ফেডারেশন ভবনে এই মতবিনিময় সভায় ভোজ্য তেল আমদানিকারকদের মধ্যে টি কে গ্রুপের
পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম, এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কাজী সালাহ
উদ্দিন এবং সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ দোকান
মালিক সমিতির সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির
সভাপতি মো. গোলাম মাওলা এবং নিউ মার্কেট ডি ব্লক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক
আবু তাহেরসহ অনেক ব্যবসায়ীও সভায় ছিলেন।
চট্টগ্রামের কর্নেল হাটে বিনিময় স্টোর নামের একটি দোকানে সয়াবিন তেলের দাম বেশি রাখায় বুধবার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ব্যবসায়ীদের
উদ্দেশে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “এরকম সঙ্কটময় সময়ে আপনাদের লাভ কম করা উচিৎ। এই
পরিস্থিতি তো অবশ্যই স্বাভাবিক হবে। তখন আপনার স্বাভাবিক লাভ করতে পারবেন।
“অল্প কয়েকজন অসৎ ব্যবসায়ীদের
কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের বদনাম হতে পারে না। তাই আপানারা নিজেদের উদ্যোগে যারা
এরকম মজুদ করে বেশি দামে তেল বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।”
আলোচনায় মিল
মালিক প্রতিনিধিদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের সালাহ উদ্দিন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে
বাজারে হস্তক্ষেপ বন্ধের পক্ষে মত জানান।
তিনি বলেন, “২০০৯-১০ সালেও এরকম একটা
পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এর আগে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এরকম হয়েছিল। কিন্তু
পরে বিষয়টি ব্যবসায়ীদের উপর ছেড়ে দেওয়ায় বাজার ঠিকই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।”
এস আলমের সয়াবিন তেলের মিলে ভোক্তা অধিকারের অভিযান
টি কে গ্রুপের
পরিচালক শফিউল বলেন, “সরকার যদি আমাদের বিশ্বাস না
করে বা আমরা বেশি লাভ করছি বলে মনে করে, তাহলে টিসিবির মাধ্যমে তেল আমদানি করুক।
এরপর প্রয়োজনে আমরা পরিশোধন করে দেব। এরপর সরকারই বাজারজাত করুক।”
সভায় অংশগ্রহণকারী
অন্য মিল মালিক প্রতিনিধিরাও একই কথা বলেন।
এস আলম গ্রুপের
সালাহ উদ্দিন সভায় বলেন, পাম তেল রপ্তানির উপর ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা উঠে
যাচ্ছে।
“ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদনের মাত্র
২০ শতাংশ সে দেশের চাহিদা। বাকিটা রপ্তানি করতেই হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আবারও
দেশটি পাম অয়েল রপ্তানি শুরু করতে পারে।”