সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রনিল।
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি নেতা ৭৩ বছরের রনিল বিক্রমাসিংহে এর আগে আরো পাঁচবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলেই ২০১৯ সালে একের পর এক বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা।
সে বছর ২২ এপ্রিল মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জা সহ মোট আট জায়গায় ভয়াবহ বোমা হামলায় ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল।
বর্তমানে স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। তার উপর মাথায় চেপে আছে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা।
সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধ ও খাবারসহ সব কিছুর সংকট দেখা দিয়েছে। যার জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয় উঠেছে দেশটি।
গত সোমবার শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে ভয়াবহ সংঘাতে অন্তত নয় জন নিহত এবং তিনশর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বিক্ষোভের মুখে ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসের পদত্যাগও দাবি করছেন।
অন্যদিকে, গোটাবায়া দেশের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট সরকার গঠন করার কথা বলে যাচ্ছিলেন।
বিরোধী দলের নেতা রনিলকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার অর্পণ তার সেই ইচ্ছার বাস্তব প্রকাশ। রনিল নিজেও তার মন্ত্রিসভায় সব দলের সদস্যদের রাখার কথা বলেছেন।
গোটবায়া-রনিল জোট সরকার শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক এই সংকট থেকে টেনে তুলতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শপথ গ্রহণের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রনিল বলেন, ‘‘আমরা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই এর মধ্য থেকে বের হতে হবে।”
চলমান সংকট সমাধানের কোনো উপায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আছে।”
অর্থনৈতিকভাবে উদার নীতিতে বিশ্বাসী রনিলের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা আছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার গত মাসেই আইএমএফ-র কাছে বেল আউট সুবিধা চেয়েছে। যা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
নিজের আগের মেয়াদগুলোতে রনিল এশিয়ার দুই আঞ্চলিক শক্তি চীন এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। চীন এবং ভারত উভয়ই শ্রীলঙ্কার বড় বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতা দেশ। উভয় দেশই শ্রীলঙ্কার উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক টুইটে লেখেন, ‘‘নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমার শুভকামনা…. যিনি অত্যন্ত অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে চলা আমাদের দেশকে পরিচালনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য সামনে এগিয়ে এসেছেন।”
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং তার জেরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করাই রনিলের জন্য এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।