এরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেন এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং
অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তাদের বিরুদ্ধে
ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় তাদের প্রার্থী হিসবে মনোনয়ন
দেওয়ায় নীল দলের ভেতরেও সমালোচনা চলছে।
তবে নীল দলের
আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আব্দুস সামাদ বলছেন, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি,
তাই দলের সাধারণ সভায় তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের
প্যানেল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে নীল দল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন
সাদা দল তাদের ৩৫ সদস্যের মনোনীত প্যানেল রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নির্বাচন শাখায় জমা
দিয়েছে।
আগামী ২৪ মে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ১৬ মে মনোনয়ন প্রত্যাহারের
শেষ দিন। এর মধ্যে কোনো দল চাইলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবে, তবে কাউকে নতুন
করে সংযুক্ত করতে পারবে না।
ম্যানেজমেন্ট
ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও
দায়িত্ব পালন করছেন।
তার বিরুদ্ধে
অভিযোগ, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে রুমে ডেকে বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে যৌন
হয়রানি করেন। সম্প্রতি বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে সুযোগ না পাওয়ায় উপাচার্য বরাবর লিখিত
অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী।
গত ২৭ এপ্রিল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ স্থগিত করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়। বিষয়টি
এখনও তদন্ত চলছে।
এর আগে ওই শিক্ষার্থী
২০১৯ সালে ১০ মে তৎকালীন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের
কাছে অধ্যাপক আকরামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন এর ‘সুরাহা’ হয়নি।
অপরদিকে অধ্যাপক
মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের
পরিচালক হওয়ার আগে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের
(নিটার) নারী সহকর্মীদের হেনস্তা ও যৌন হয়রানি করেন।
গত বছর ২২ নভেম্বর
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ
বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে নিটার ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন। এ বিষয়টিরও কোনো সুরাহা হয়নি।
বিতর্কিত ব্যক্তিদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় নীল দলের সদস্যদের
মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নীল দলের সিনেট
সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপীঠে, যেটা প্রতিষ্ঠার
শতবর্ষ পূর্ণ করেছে, সেখানে যৌন হয়রানি একজন শিক্ষকের জন্য সবচেয়ে বড় নৈতিক স্খলন।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট
যে অভিযোগ তদন্তের জন্য যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠিয়েছে, সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নমিশন
দেওয়ায় আমাদের বিদ্যাপীঠের ইমেজের প্রশ্ন উঠবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক এই ডিন বলেন, “এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল নীল দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ
হবে।”
অভিযোগের তদন্ত
চলা অবস্থায় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় নীল দলের দুই বারের
সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য
( প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের কাছে।
তিনি বলেন, “আমি শুনেছি, নীল দলের সভায় আলোচনা হয়েছিল যে, আমরা যারা প্রশাসনে আছি,
তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে ঘুণাক্ষরেও আমার
সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় নাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সিনেটকে এক সময় বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে অভিহিত করা হত উল্লেখ করে
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর এখানেই সর্বপ্রথম তার উপর
শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
এমন সম্মানের অবস্থান তুলে ধরে নীল দলের আহ্বায়ক বলেন, “সেই মর্যাদাপূর্ণ ফোরামে বিতর্কিত কাউকে অথবা অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে
এমন কোনো শিক্ষকের মনোনয়ন প্রদান অনাকাঙ্ক্ষিত।”
অধ্যাপক আব্দুস
সামাদ বলেন, “একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া
হয়ে থাকে। এটা কারও একক সিদ্ধান্ত নয়, নীল দলের সাধারণ সভায় এই মনোনয়ন হয়। সাধারণ সভার
সিদ্ধান্তেই তারা প্রার্থী হয়েছেন।
“যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত
তো কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। বিষয়টা এরকমই।”
সিনেট নির্বাচনে
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন কোষাধ্যক্ষ।
এবিষয়ে জানতে
চাইলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “মনোনীত প্রার্থীদের প্যানেল জমা দেওয়ায় হয় রেজিস্ট্রার অফিসে। ১৬ মে
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এরপর তালিকা চূড়ান্ত হলে সেটা আমার কাছে আসবে।”
অভিযোগের তদন্ত
চলা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“এবিষয়ে উপাচার্য বলতে পারবেন।”
উপাচার্য অধ্যাপক
মো. আখতারুজ্জামান এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, “অভিযুক্ত আর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ভিন্ন জিনিস। তবে
কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেলে বাছাই কমিটি সেটা দেখবে। যাদের প্রার্থিতা সঠিক বলে
প্রমাণিত হয়, তারাই নির্বাচন করতে পারবে।”