ক্যাটাগরি

ভারতীয় সিনেমা দেখানোর দাবি হল মালিকদের, তথ্যমন্ত্রীর আশ্বাস

বৃহস্পতিবার ঢাকায় তথ্য ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নিজেদের দাবি উত্থাপন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি অনুদানে দেশে বাণিজ্যিক সিনেমার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; পাশাপাশি সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমাও আমদানি করা যেতে পারে।

প্রেক্ষাগৃহগুলো আধুনিক করার মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রের হারানো অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার আওতায় সিনেমা হল নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছেন হল মালিকরা।

এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিল গত ৩১ মার্চ; সেই সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও হল সংস্কারের জন্য ৫৩ হল মালিক আবেদন করলেও বাকিরা দ্বিধায় রয়েছেন বলে জানান প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস।

হল মালিকদের এ শীর্ষ নেতা সভায় বলেন, “হল মালিকরা ‍ঋণ নিতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু ঋণ নিয়ে টাকাটা সুদসহ ফেরত দিতে গেলে ছবি চালায়েই ফেরত দিতে হবে। এখন দেশে যে ছবিগুলো হচ্ছে, সেই ছবি চালিয়ে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সম্ভবনা নাই। সেই কারণেই হল মালিকরা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে।”

সেই সঙ্কট নিরসনে সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমা দেশের সিনেমা হলে মুক্তির অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন সুদীপ্ত।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কয়েক বছর ধরেই এ দাবি জানিয়ে এসেছেন তিনি। তার ভাষ্যে, “সিনেমা হলে দর্শক ফিরলে হল মালিকদের ঋণ পরিশোধে কোনো জটিলতা হবে না; অন্যরাও সিনেমায় হল নির্মাণে আগ্রহী হবেন।”

মতবিনিময় সভায় সুদীপ্ত কুমার দাস ছাড়াও সাথী সিনেমা হলের কর্ণধার মিয়া আলাউদ্দিন, অভিসার সিনেমা হলের মালিক সফর আলী ভুঁইয়াসহ আরও অনেকেই দেশের সিনেমার নির্মাণ বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তোলেন।

দাবির বিষয়ে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হাছান মাহমুদ বলছেন, আগের তুলনায় সিনেমার অনুদানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; এর মধ্যে বাণিজ্যিক সিনেমার সংখ্যাও বেড়েছে। অনুদানের সিনেমা ২০টি হলে মুক্তির বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের সিনেমার সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ছে।

ভারতীয় সিনেমা আমদানিতেও কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী; তবে তার আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর তাগিদ দেন তিনি।

“উপমহাদেশের সিনেমা আমদানি নিয়ে প্রদর্শক ও পরিচালকরা একমত হয়েছে। শিল্পী সমিতি এখনও একমত নয়। সবার সঙ্গে কথা বলে ১০-১২টার মতো উপমহাদেশের সিনেমা মুক্তি পেলে সিনেমা হলগুলোরও ভালো হবে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের মধ্যেও পাকিস্তানে নিয়মিত ভারতের সিনেমা মুক্তি পায়। আগে মুক্তিতে বাধা ছিল, পরে সেই বাধা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের (পাকিস্তানের) সিনেমার অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো।”

ঋণ পরিশোধ নিয়ে হল মালিকদের শঙ্কার মধ্যে তথ্যমন্ত্রী বলছেন, সিনেমা হলের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত আয় থেকেও চাইলে হল মালিকরা ঋণ পরিশোধের উদ্যোগী হতে পারেন।

তার ভাষ্যে, “সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে ফুড কোর্ট ও মার্কেটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে দর্শকরা যেমন সিনেমা দেখতে আগ্রহী হবেন তেমনি শুধু হলের উপর নির্ভর না করে সেখান থেকে আয় থেকেও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন হল মালিকরা।”

তথ্যসচিব মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময়কালে হল মালিকদের অনেকেঋণের মেয়াদ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৮ বছর থেকে আরও দুই বছর বাড়ানোর দাবি করেছেন; সেই সঙ্গে সুদের হার শহরের ৫% ও গ্রামের সাড়ে ৪% থেকে কমিয়ে আনারও দাবি করেছেন অনেকে।

বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগম।