বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক
বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “দেশে নাকি মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে দুই হাজার ৮‘শ
৮২ টাকা…কার কী আয় বেড়েছে আমি জানি না।
“তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এই নিয়ে কোনো
সন্দেহ নেই,আওয়ামী লীগের বাইরে যারা আছে তারা যে না খেয়ে আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাদের ওপর ‘হামলার’
প্রতিবাদে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
এতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের উপর ‘হামলা’,
জাতীয় নির্বাচন ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
নিয়ে আমরা কয়েকবার সভা করেছি। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আমরা জানি যে, সাধারণত
সরকার দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেয় জনগণের সুবিধার্থে।
“আর এই সরকার তেলের মূল্য বৃদ্ধি করল ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। এই যে
টাকা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে দেশের মানুষ তা জানতে চায়।”
দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেবের বাসায় হামলা হয়েছে, রেদোয়ান
সাহেবের উপর হামলা হয়েছে, আরও যাদের ওপর হামলা হয়েছে…আমরা আশা করছি যে প্রতিরোধ
গড়ে উঠেছে এই প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাতের মাধ্যমেই আমরা আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাব।”
মির্জা আব্বাসের ভাষ্য, “কয়েকদিন
আগে তথাকথিত বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া
হবে না। এই কথা যেদিন বললেন, তার ঠিক পরদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা খন্দকার মোশাররফ
হোসেন সাহেবের বাড়িতে হামলা করা হ ঈদ পুনর্মিমিলনী অনুষ্ঠানে।
“এরপরে রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা করা হল, বাংলাদেশে ১০/১২ টি
জায়গায় হামলা করা হয়েছে ঈদ পুনর্মিলনী উৎসবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলার পরও এ ধরনের ঘটনা কী করে ঘটল?
সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ-আদেশ অথবা অনুরোধের পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটল।
“অর্থাৎ এদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা চোর-বাটপার-লুটেরারা
আজকে প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনে না। তাহলে কেন খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হবে,
কেনো রেদোয়ানের গাড়িতে হামলা হবে?
“খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হয়েছে…
সেখানে কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে, রেদোয়ানের ওখানে
হামলা হয়েছে, সেখানেও কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে…।
অর্থাৎ প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে। এখন প্রত্যাঘাত করতে হবে তাদেরকে।”
‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়’
মির্জা আব্বাস বলেন, “নির্বাচন
কমিশনার বলছে, আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি, ইভিএমে করব না স্বাভাবিক করব। ওই দিকে
প্রধানমন্ত্রী বলে ফেললেন যে, তিনশ’ সিটে ইভিএমে নির্বাচন
হবে।
“তাহলে আমরা আজকে বলছি যে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে
না-ওই কথা প্রমাণ হয়ে গেল। হাসিনা সরকারের অধীনে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো
নির্বাচন নয়। এটা আমাদের বক্তব্য।”
১৯৮৬ সালের মতো যারা এবার শেখ হাসিনার অধীনে
নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে তারা ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেন আব্বাস।
তিনি বলেন, “মান্না সাহেব (মাহমুদুর
রহমান মান্না) বলেছেন, যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান
হবে। এই কথাটা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের
জনসভায় বলেছিলেন, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে।
কিন্তু বলার পরে তিনি ঠিকই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি নিজেকে জাতীয় বেঈমান
হিসেবে প্রমাণিত করেছিলেন।
“এবারও যারা নিজেকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রমাণ করতে চাইবে
ইনশাল্লাহ আমরা সরকার এবং তাদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেব।”
বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রীলঙ্কার পরস্থিতি তুলে ধরে এ
বিএনপি নেতা বলেন, “আজকের এই অবস্থাটা কেন হল? কারণটা হল- চুরি। শ্রীলঙ্কা প্রাইভেট
লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গিয়েছিল, শ্রীলংকা ঋণ নিত, সেই ঋণের টাকায় মেগা প্রকল্প করত
আর মেগা প্রকল্পের টাকা বিদেশে পাচার করত। এ কারণে সেখানে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে,
মানুষজন নিঃস্ব হয়ে গেছে।
“আপনারাও (সরকার) কিন্তু এই কাজগুলো (মেগা প্রকল্প) স্টপ করছেন না।
এখনও ১২টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ওই সমস্ত মেগা
প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে, কথা বলছেন যে, এই সব প্রকল্প হলে
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।”
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর
চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, রুহুল কবির রিজভী, আজিজুল বারী
হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস,
যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষকদলের
হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর
রহিম, ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য রাখেন।