তবে পরিবার চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য হাসপাতালে বা বিদেশে নিয়ে যেতে পারবে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সম্রাট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৩১ মাস আগে। এর মধ্যে গত দেড় বছর তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কারা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর বুধবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তি পেলেও চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকের সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে করে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন হাসপাতালের পরিচালক নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “এতদিন উনার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা জেল অথোরিটিকে অভিভাবক ভেবেছি। এখন যেহেতু উনি মুক্ত, আজকে থেকে চিকিৎসার বিষয়ে উনার অভিভাবকদের জানাব। এখন তার অভিভাবক বিবেচনা করবে, কোথায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। দেশে নাকি বিদেশে নেবে।”
মেডিকেলের কার্ডিয়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান মাসুম মণ্ডল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্রাট ‘হার্টের ক্রনিক অসুখে’ ভুগছেন।
“এটা কিছু সময় স্টেবল থাকে, কিছু সময় আনস্টেবল হয়ে যায়। উনার হার্টে যে অসুখগুলো আছে, তার তিন চারটা ডায়াগনোসিস এমন যে, হঠাৎ করে মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে।”
এই চিকিৎসক বলেন, “এতদিন মনিটর করার পর গত তিন সপ্তাহ ধরে উনার কন্ডিশন স্থিতিশীল আছে। আগামী সোমবারের দিকে আমরা আবার টোটাল রিভিউ করব। বেটার কোনো চিকিৎসা আছে কিনা, সেটা নিয়ে আমরা উনার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব। উনার অভিভাবকরাই সিদ্ধান্ত নেবে কোথায় চিকিৎসা নেবেন।”
পরিবার চাইলে সম্রাটকে এখন বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে কিনা- এমন প্রশ্নে ডা. রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেন, “এখন উনার হার্ট একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু উনার রোগের গতিবিধি এমন যে, অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে যে কোনো সময়। পরিবার রিস্ক নিয়ে যেতে চাইলে বন্ড দিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে কর্তপক্ষ দায়ী থাকবে না।”
মুক্তি পেলেন সম্রাট, আছেন হাসপাতালেই
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া লাগবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনার ভালো চিকিৎসা দরকার। সেটা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে, তবে তারপরও পরিবার চাইলে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারে। আমরা উনার অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করব। উনার অভিভাবক অন্য কোথাও না নেওয়া পর্যন্ত উনি হাসপাতালেই থাকবেন “
হাসপাতালের পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হার্টের ক্যাপাসিটি (কার্যক্ষমতা) ৬০-৬২ শতাংশ থাকা দরকার, সেখানে সম্রাটের আছে ৩১-৩৩ শতাংশ, কখনো ৩৪ শতাংশ ছিল।
“হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেও উনি স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারতেন না। আমরা শঙ্কিত ছিলাম, এখানে তার কিছু হয়ে যায় কিনা। এখানে ভর্তি হওয়ার আগে তার ভালভ রিপ্লেসমেন্ট করা ছিল। এ পরিস্থিতিতে তিনি আমাদের কাছে এসেছেন। আমরা তাকে কয়েদি নয়, রোগী হিসেবে দেখেছি।”
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
পরে অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে আরও দুটি মামলা করে সম্রাটের বিরুদ্ধে।
তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা আগেই শেষ হয়েছিল। অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল জামিন পান তিনি।
সবশেষে বুধবার অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিন পেলে বিকালে সম্রাটকে হাসপাতালে মুক্তি দেওয়া হয়। এ মামলা বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।