ক্যাটাগরি

ইন্টেলিজেন্ট চাচা

আজ প্রায় পাঁচদিন হলো এই ব্যালেন্স এখনও স্থির রয়ে গেছে। মোবাইলে কথা যে বলেনি তা কিন্তু নয়। তবে নিজ থেকে ফোন করে নয়, যাদের দরকার হয়েছে তারা নিজেরা ফোন করে ওনার সাথে যোগাযোগ করেছে।

রহিম চাচাকে পুরো এলাকায় সবাই ‘ইন্টেলিজেন্ট চাচা’ বলে ডাকে। আমাদের স্টেশনের পাশে ব্যাংকের যে এটিএম বুথটা আছে ওখানে তিনি সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বোধহয় আমাদের জন্মেরও আগে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি সদা হাস্যোজ্জ্বল রহিম চাচা, ঝুমঝুম বৃষ্টিতে যখন আমরা তিনতলা বাসার জানালা খুলে বৃষ্টির দৃশ্য উপভোগ করতাম তখন তিনি বুথের একপাশে প্লাস্টিকের মোড়াতে বসে ছাতা খুলে দিয়ে বৃষ্টির ঝটকা থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতেন।

আবার হাড় কাঁপানো শীতে যখন আমরা লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমাতাম তখন তিনি ফুটপাত থেকে কেনা কোরিয়ান বর্ণমালার জবড়জং জ্যাকেট গায়ে দিয়ে ওই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে সময় ফুরোতে থাকে। আমরা বড় হই। অ্যাকাউন্ট খুলি, মাঝে মধ্যে ওই বুথ থেকে টাকাও তুলি। নতুন নতুন মানুষ আসে, নতুন নতুন চকচকে টাকা তোলে। কিন্তু ‘ইন্টেলিজেন্ট চাচার’ ভাগ্য ওই প্লাস্টিকের মোড়ায় বন্দি থাকে।

সবকিছুর পরিবর্তন দেখি, কিন্তু রহিম চাচার এতটুকুনও পরিবর্তন দেখি না। সেই আগের মতোই বুটজোড়া, কোম্পানির লোগোসমেত মোটা কাপড়ের ড্রেস এখনও আছে। তবে বয়সের লুকোচুরি খেলার একটা দাগ কিন্তু রহিম চাচার শরীরে ঠিকই লেগেছে।

রহিম চাচার চার সদস্যের পরিবারে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। এই এটিএম বুথে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করে রহিম চাচা তার দুই ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। যদিওবা ছেলে বিয়ে করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এখন আলাদা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে একমাত্র মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। মেয়ের বিয়েতে কোনকিছুর কমতি রাখেননি তিনি। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মেয়ে যেন সুখে থাকতে পারে এ চিন্তা করে বরপক্ষের সব দাবিই মিটিয়েছেন।

দেখতে দেখতে রহিম চাচাও পড়ন্ত বেলায় এসে পৌঁছালেন। সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে জানালেন রহিম চাচার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি আর বেশিদিন নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। হয়তো এ ঈদের পরপরই ওনাকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাওয়াতে রহিম চাচার জীবনের গল্প বাঁক নেয় অন্যদিকে।

রংচটা হয়ে যাওয়া তিন হাজার তিনশ দশ মডেলের ফোনটি বেজে উঠল। রহিম চাচা গোয়ালে থাকা গাভীটিকে খড়কুটো খাওয়াচ্ছিলেন। হম্বিতম্বি হয়ে তিনি ফোনটি রিসিভ করলেন। মেয়ে ফোন করেছে, হ্যালো, বাবা।

হ্যাঁ, মা কেমন আছিস, জামাই কেমন আছে?

বাবা, আমরা ভালো আছি।তুমি কেমন আছ? মা, কেমন আছে?

হ্যাঁরে, ভালো আছে।

বাবা, কী বলছি শোন। আমার ছোট জা-এর বাবার বাড়ি থেকে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য আমার শ্বশুরবাড়িতে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে। তোমাদের জামাই বলছিল, তুমিও যদি ত্রিশ হাজার টাকা দিতে পারতে! আচ্ছা আচ্ছা সমস্যা নেই, তুমিও না হয় বিশ হাজার টাকা তোমার জামাই-এর নাম্বারে বিকাশ করে দিও। আমি কোনোভাবে তোমার জামাইকে রাজি করিয়ে ছাড়বো।

মেয়ের কথা শুনে রহিম চাচা গোয়ালে থাকা একমাত্র দুধেল গাভীটির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে মেয়েকে বললেন, আচ্ছা মা, তুই চিন্তা করিস না। টাকা ঠিকমতো পৌঁছে যাবে। শরীরের যত্ন নিস, ভালো থাকিস।

কথাগুলো বলতে বলতে বেখেয়ালে ‘ইন্টেলিজেন্ট চাচার’ দু’এক ফোঁটা অশ্রু গরুটির গায়ে গড়িয়ে পড়ল। মালিকের স্নিগ্ধ অনুভূতি পেয়ে বোবা প্রাণী দু’চোখ বুঝে রইল।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!