ঠাকুরগাঁও সদরের জগন্নাথপুর
ইউনিয়নের বাসুদেবপুর খাগড়াবাড়ি গ্রামে শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফখরুল নানা
প্রসঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল
বলেন, “আমরা সব সময় বলেছি, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও তাদের দলের লোকেরা বাংলাদেশকে লুট
করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে লুট করে তারা দেশকে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে পরিণত করছে।
“ওবায়দুল কাদেরও একই
কথা বলছেন। তাদের দলের নেতারা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা লুট করে পাচার করেছেন।”
বৃহস্পতিবার ফরিদপুর
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
বলেন, “এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে হলে, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে, গণতন্ত্রকে
বাঁচাতে হলে, দেশের অর্জনকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। সংগ্রামী,
সৎ ও পরীক্ষিতদের নেতৃত্বে আনতে হবে। যারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তাদেরকে কোনভাবেই নতুন
কমিটিতে রাখা যাবে না। ফরিদপুরে অনেক রক্তপাত হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে হাজার
হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এর পুনরাবৃত্তি যেন আর
না হয়।”
ফখরুল বলেন, “সত্য
স্বীকার করায় আমি ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ধন্যবাদ
জানাতে চাই কারণ তিনি সত্য উচ্চারণ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে তার দলের নেতারা
কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে, লুট করেছে। এই লোকগুলো তাদের দলে আছে এবং সম্মেলনে এসব
লোককে তিনি বাদ দিতে চান। পক্ষান্তরে তিনি লুটপাটের কথা, টাকা পাচারের কথা স্বীকার
করেছেন।”
আওয়ামী লীগ নেতা কাদের
বিএনপি নেতাদের আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের পরামর্শও দেন বিভিন্ন বক্তব্যে।
এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন,
“এমন কথা ওবায়দুল কাদের সব সময় বলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ।
বাংলাদেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, টাকা পাচার ও অর্থনীতিকে
ধ্বংস করে তারাই সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারেরই পদত্যাগ করা
উচিৎ।”
এর আগে মির্জা ফখরুল
ওই গ্রামের নিহত দুই বিএনপিকর্মী হারুন ও জয়নালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের আর্থিক
সহায়তা দেন।
এই দুই কর্মী দশম জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের সময় ঠাকুরগাঁও সদরের বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
ফখরুল সাম্প্রতিক সময়ের
বাণিজ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস
করে ভুল’ করেছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “বাণিজ্যমন্ত্রী
টিপু মুন্সি সাহেব নিজে একজন বড় ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কে তার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিৎ ছিল। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে বিশ্বাস করার
কারণটাই হচ্ছে তিনি ব্যবসায়ীদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যে
অবস্থা সেই অবস্থায় আমরা পরিষ্কার করে দেখতে পাই সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে তাদের প্রটেকশনে
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং তাদের যারা লোক তাদের সিন্ডিকেটরাই এই অবস্থার
জন্য দায়ী।”
তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর
পদত্যাগ করা উচিৎ শুধু নয়, সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিকহারে
বৃদ্ধির কারণে।
শ্রীলঙ্কার মত বাংলাদেশে
পরিস্থিতি হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রীলঙ্কার
মত পরিস্থিতি বাংলাদেশে হতে বাধ্য। কারণ বাংলাদেশে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এখানে
ঋণ এত বেশি গ্রহণ করা হয়েছে, সেই ঋণের বোঝা মাথাপিছু ৪৭২ ডলার করে পড়েছে। এখানে অতি
শীঘ্রই যে সমস্যাটা বাংলাদেশে দেখা দেবে মুদ্রাস্ফীতি এত বাড়বে, সেখানে মানুষ দেউলিয়া
হতে বাধ্য হবে।
ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের
জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জনগণ ও সমস্ত রাজনৈতক দলগুলো বর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনের
সময় এই এলাকাতে যখন জোর করে নির্বাচনী মাঠ দখলের জন্য চেষ্টা করছিল আওয়ামী লীগ সরকার,
সেসময় জনগণের প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধের মুখে পুলিশের গুলিতে এখানে হারুন ও
জয়নাল নামে দুইজন বিএনপি কর্মী নিহত হয় এবং একজন আহত হয়।
“প্রতিবছরই আমরা এই
পরিবারগুলোর অবস্থা জানার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতা করি। এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত
হয় এই আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ বল প্রয়োগ করে এই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা
তাদের মত করে নিতে চায় এবং বল প্রয়োগ করে তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়।”
২০১৪ ও ২০১৮ সালের
জাতীয় নির্বাচনে বল প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে
তিনি বলেন, এই দেশে নির্বাচন হতে হবে জনগণের ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ জনগণ তাদের
যেন ভোট প্রয়োগ করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
“অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে
আমরা দেখেছি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কখনো সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না এবং জনগণের মতামতের
প্রতিফলন হয়। সে কারণে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।”
তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচন
কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন দাবি করেন।
রাজপথের ঐক্য প্রসঙ্গে
ফখরুল বলেন, রাজপথের ঐক্য ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি
দিচ্ছে। আজ আন্দোলন হওয়ার সময় এসে গেছে এবং গোটা জাতি ঐক্য সৃষ্টি হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা
বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি
নুর করিম, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ উপস্থিত ছিলেন।