ক্যাটাগরি

স্টেবলকয়েন ও ক্রিপ্টো বাজারে ধস, শঙ্কার নাম ‘ক্রিপ্টোক্র্যাশ’

এপ্রিল মাসেই
‘টেরা লুনা’ টোকেনের দাম ছিল একশ ১৮ ডলার। কিন্তু, বৃহস্পতিবারে টোকেনটির দাম নেমে
এসেছে দশমিক শূন্য নয় সেন্টে। এর প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট ‘টেরাইউএসডি’-তে; স্টেবলকয়েন
হিসেবে এতোদিন স্থিতিশীলই ছিল এর দাম।

বিশ্ব অর্থনীতি
নিয়ে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ক্রিপ্টো মুদ্রা বাজার থেকে বিনিয়োগের অর্থ উঠিয়ে নিচ্ছেন।
আর তাতেই বাজারে ধস নেমেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যান্য ক্রিপ্টো
মুদ্রার মতোই ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে স্টেবলকয়েন। তবে, দুই ঘরানার ডিজিটাল
মুদ্রার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এর মূল্যায়নে। সাধারণত, মূলধারার কোনো স্বীকৃত মুদ্রা
অথবা স্বর্ণের মত মূল্যবান কোনো সম্পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণ করা হয়
স্টেবলকয়েনের।

যে সম্পদের ভিত্তিতে
দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তার সঙ্গে স্টেবলকয়েনের দাম সমান রাখার চেষ্টা করে লেনদেনকারী
প্রতিষ্ঠানগুলো।

উদাহরণ হিসেবে
বলা যেতে পারে– ডলারের ভিত্তিতে মূল্যায়িত একটি স্টেবলকয়েন বা একটি টোকেনের বাজার
মূল্য হতে পারে এক ডলার।

কিন্তু টেরাইউএসডির
দাম বৃহস্পতিবার শূন্য দশমিক ৪ ডলারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে স্টেবলকয়েন লেনদেনের
ওয়েবসাইট কয়েন মার্কেট ক্যাপ।

সবচেয়ে জনপ্রিয়
স্টেবলকয়েন টেদারের দামও পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। টেদার কয়েনের দাম নেমে এসেছে ৯৫
সেন্টে।

শঙ্কার নাম ‘ক্রিপ্টোক্র্যাশ’

ক্রিপ্টো মু্দ্রা
আর স্টেবলকয়েন বাজারের অনিশ্চয়তার মধ্যে গুগল ও টুইটারে ‘ক্রিপ্টোক্র্যাশ’ লিখে সার্চও
বেড়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে,
বৈশ্বিক ক্রিপ্টো মুদ্রা বাজারের সম্মিলিত বাজার মূল্য এখন এক লাখ ১২ হাজার কোটি ডলার,
যা গত নভেম্বরের এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ দাম পড়েছে গত এক সপ্তাহে।

২০২১ সালের শেষ
দিকে সর্বোচ্চ মূল্যের নতুন রেকর্ড গড়েছিল বাজারের বৃহত্তম ক্রিপ্টো মুদ্রা বিটকয়েন।
ওই সময়ে প্রতিটি বিটকয়েনের দাম ছিল প্রায় ৭০ হাজার ডলার। কয়েক মাসের ব্যবধানে বিটকয়েনের
দাম নেমে এসেছে ২৭ হাজার ডলারের নিচে।

ক্রিপ্টো মুদ্রা
বাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুদ্রা ইথেরিয়ামের দাম ২৪ ঘণ্টায় কমেছে ২০ শতাংশ।

টেরাইউএসডির ধস
দেখেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সেস
কপোলা।

বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
নিজস্ব ক্রিপ্টে সম্পদের একটা বড় অংশ বেচে দেওয়ায় এবং বাকি সবাই বাজার থেকে দ্রুত বিনিয়োগের
অর্থ উঠিয়ে নেওয়ায় চেষ্টা করার ফলেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বুধবারেই টেরা
লুনা এবং টেরাইউএসডির মূল কোম্পানি ‘টেরাফর্ম ল্যাবস’ প্রতিষ্ঠাতা ডু কোয়ান টুইট করেছেন,
“আমি বুঝতে পারছি যে গত ৭২ ঘণ্টা আপনাদের সবার জন্যই অনেক কঠিন ছিল। জেনে রাখবেন যে
এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আপনাদের সবার সঙ্গে কাজ করব বলে মনস্থির করে রেখেছি আমি এবং আমরা
পরিত্রাণের পথ বানিয়ে নেবই।”

সঙ্কট কাটিয়ে
ওঠার সম্ভাব্য উপায় হিসেবে নতুন টেরা লুনা টোকেন প্রচলনের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে
জানিয়েছে বিবিসি।

তবে, বড় আর্থিক
ক্ষতির মুখে পড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন মূল কোম্পানির সহযোগিতা চাইছেন বলে উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমটির
প্রতিবেদনে।

নিজস্ব ডিসকর্ড
সার্ভারে নতুন কারও প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে টেরা লুনা কর্তৃপক্ষ। নানা বিষয়
নিয়ে আলাপের জন্য ডিসকর্ড সার্ভারটি ব্যবহার করতেন টেরা লুনার বিনিয়োগকারীরা। লক করে
রাখা হয়েছে ওই সার্ভারটি। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘নতুন কেউ এসে যেন ভয়, অনিশ্চিয়তা, সন্দেহ
এবং ভুয়া তথ্যের প্রচার করতে না পারে, সে জন্যই লক করে দেওয়া হয়েছে’ সার্ভার।

অন্যদিকে, টেদারের
প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টুইট করে জানিয়েছেন, স্টেবলকয়েন বেচে দিতে ইচ্ছুক যে কারও
পাওনা পরিশোধ করার মতো নগদ অর্থ আছে তার কোম্পানির কাছে।

কঠোর নীতিমালা চান নীতিনির্ধারকরা

স্টেবলকয়েনের
লেনদেন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন একাধিক দেশের জনপ্রতিনিধি
ও কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবারেই টেরাইউএসডি
ধসের ঘটনা টেনে এক সিনেট কমিটি বৈঠকে কঠোর নীতিমালার ডাক দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী
জ্যানেট ইয়েলেন।

“এটাই চিত্রায়িত
হচ্ছে যে এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল পণ্য। আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অনেকগুলো ঝুঁকিও
আছে এবং আমাদের একটি জুতসই কাঠামো প্রয়োজন,” বলেন তিনি।