মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণে স্পেসএক্স-এর দ্রুত
উত্থানের বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে।
স্পেসএক্স-এর পরবর্তী উৎক্ষেপণ হবে শুক্রবার
বিকেলে। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেইজ’ থেকে স্টারলিংকের ৫৩টি ইন্টারনেট
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে। এ বছর স্টারলিংকের দ্বাদশ উৎক্ষেপণ হবে এটি। পাশাপাশি, এ
সপ্তাহ শেষে ফ্লোরিডা থেকে আরেকটি অভিযান চালাতে পারে স্পেসএক্স।
এই বছর বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে স্পেসএক্স,
যেটি বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ জগতে প্রতিষ্ঠানটির একচ্ছত্র আধিপত্যকে আরও এগিয়ে নেবে।
স্পেসএক্স-এর নেতৃত্বে বার্ষিক উৎক্ষেপণের
মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধের বৈশ্বিক মহাকাশ উৎক্ষেপণকেও। সে সময়ে
ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের তুলনায় সরকারী উদ্যোগেই বেশি রকেট উৎক্ষেপণ হতো।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কুইলটি অ্যানালিটিকস’-এর
ডেটা অনুযায়ী, রকেট উৎক্ষেপণের ইতিহাসে রেকর্ড ১৪৫টি রকেট উৎক্ষেপণ হয়েছে ২০২১ সালে।
এর আগে সবচেয়ে বেশি ১২৯টি রকেট উৎক্ষেপণ হয়েছিল ১৯৮৪ সালে।
স্পেসএক্স বর্তমান গতি ধরে রাখলে, এ বছর
৫২টির বেশি রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারে। যেটি তাদের নিজস্ব গত বছরের রেকর্ড ৩১টি উৎক্ষেপণকে
সহজেই টপকে যাবে।
“এমনকি ১০ বছর আগেও, এসব উৎক্ষেপণ বিরল
ছিল” –সিএনএনকে বলেছেন কুইলটি অ্যানালিটিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস কুইলটি।
তিনি আরও জানান, ২০০১ সালে বিশ্বব্যাপী
রকেট উৎক্ষেপণ হয়েছে মাত্র ৫১টি।
“সেটি বিবেচনায় রাখলে, স্পেসএক্স একাই
৫২ বার উৎক্ষেপণ করছে” –বলেন তিনি।
“এটি আবিশ্বাস্য।”
২০২২ সালে স্পেসএক্স-এর বেশিরভাগ উৎক্ষেপণই
স্টারলিংকের কথা মাথায় রেখে হয়েছে। কারণ, এর গ্রাহকভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবসা নির্ভর
করে অরবিটে থাকা স্যাটেলাইটের উপর। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রমাগত ইন্টারনেটের
গতি বাড়ানোর স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অরবিটে এখন পর্যন্ত দুই হাজার দুইশটিরও
বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় আড়াই
লাখ ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সেবাটি ব্যবহার করছেন, সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে জানিয়েছে
প্রতিষ্ঠানটি।
স্পেসএক্স অবশ্য রকেট শিল্পে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের
থেকে বেশ এগিয়ে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই থাকবে, বিষয়টি এমন নয়।
স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন রকেটকে টক্কর দেওয়ার
মতো দুটি নতুন রকেট এসেছে। একটি হচ্ছে জেফ বেজোসের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু অরিজিন’-এর
নতুন রকেট ‘নিউ গ্লেন’। অন্যটি, বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড
লঞ্চ অ্যালায়ান্স’-এর রকেট ‘ভালকান সেন্টর’।
স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক এবং প্রতিদ্বন্দ্বী
ইন্টারনেট ব্যবসা সহ রকেটে উৎক্ষেপণ করা এসব স্যাটেলাইটের সংখ্যা, ‘মহাকাশে স্যাটেলাইট
জট নিয়ে’ বিতর্কও তৈরি করেছে।
এসব স্যাটেলাইটের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে
বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট
প্রায়ই খুব কাছাকাছি চলে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাবধানতা বাড়ানোর বিষয়টি
আগেই বলেছেন গবেষকরা। অন্যরা এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে স্পেসএক্স এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের
করণীয় পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
“যেসব প্রতিষ্ঠান মহাকাশে আবর্জনা সৃষ্টি
করতে পারে, সেই সব আবর্জনা থেকে তারা শীঘ্রই ও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।” –বলেছেন মহাকাশ
গবেষণা সংস্থা ব্রাইসটেকের সিইও ক্যারিসা ক্রিস্টেনসেন।
এমন সংঘর্ষে তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ও
বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে বলে মনে করেন তিনি।
স্পেসএক্স-এর সক্রিয় রকেটের পাশাপাশি,
আরও কিছু ছোট আকারের নভোযান ফ্লোরিডার ‘স্পেস কোস্ট’ থেকে উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা প্রতিবেদনে
উল্লেখ করেছে সিএনএন।