দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন এডিপির প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির এই আকার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।“
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে ১১ মে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়; যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
বরাদ্দের এ পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির বরাদ্দের চেয়ে ২০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করা হয়।
আর নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ৩৮ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। বরাবরের মত বাস্তবায়নের মাঝপথে চলতি অর্থবছরের এডিপি সংশোধন করে এর আকার কমিয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত এডিপির অর্থায়নে দেশি সম্পদ থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। আর ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রায় ৩৮ শতাংশ বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বরাদ্দের শীর্ষে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত
একক খাতে বরাদ্দের বেলায় গত কয়েক বছরের মত এবারও এডিপিতে সর্বোচ্চ প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। বিপুল এ অর্থ সড়ক, রেল, আকাশ পথসহ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে ব্যয় করা হবে।
আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ শতাংশের হিসেবে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বরাদ্দের প্রায় ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সে হিসাবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ ২১ শতাংশ বেশি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার পরের অর্থবছরের জন্য অগ্রাধিকার খাত ও বরাদ্দের নকশা তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠান; সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ সাজাই।
“প্রত্যেক বছর অর্থ মন্ত্রণালয় এডিপির আকার ও খাতভিত্তিক বরাদ্দের একটা সিলিং আমাদের কাছে পাঠান। সেই সিলিং অনুযায়ী খাতভিত্তিক বরাদ্দগুলো আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে ভাগ করে দেই।”
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে ভ্রমণ সময় কমে আসবে। মানুষের কর্মঘণ্টা বাড়বে এবং দেশে বিনিয়োগের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।
সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই আমদানি নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পের তুলনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যয় করে বাস্তবায়ন করা যাবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
“এই কৌশলে যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা রয়েছে সেগুলোর জন্য আমদানি করতে হলেও সমস্যা নেই। কারণ সেই আমদানি বিল বৈদেশিক সহায়তা দিয়েই পরিশোধ করা যাবে।”
এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সঠিক’।
দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তা ঘাট তৈরিতে প্রায় সবকিছুই এখন দেশি পণ্য দিয়ে হচ্ছে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি বিশেষ করে রিজার্ভ ঠিক রাখতে সরকারের এ পদক্ষেপ সঠিক, যোগ করেন তিনি।
খাতওয়ারী সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব
>> পরিবহন ও যোগাযোগ; সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ২৯ শতাংশ।
>> বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১৬ শতাংশ।
>> শিক্ষা; তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা ৩৮ লাখ টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ১২ শতাংশ।
>> গৃহায়ণ ও গণপূর্ত; ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ।
>> স্বাস্থ্য; প্রায় ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ৮ শতাংশ।
>> স্থানীয় সরকার; ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
>> কৃষি; ১০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ১২
শতাংশ।
>> পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ; ৯ হাজার ৮৫৯ কোটি
টাকা; মোট বরাদ্দের ৪ শতাংশ।
>> শিল্প; ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ২০ শতাংশ। >> বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি; ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।