চট্টগ্রামে জন্ম তার, চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা। এখানেই টেস্ট দলে ডাক পাওয়া, টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেই ৫ উইকেট নেওয়া এবং এখানেই এবার তার টেস্ট ক্যারিয়ারের পুনরুজ্জীবন। ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিলেন নাঈম।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন সকালে ২ উইকেট নেওয়ার পর দিনজুড়ে আর খুব ভালো করতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনে দারুণ বোলিং করে নিলেন আরও ৪ উইকেট। ১০৫ রানে ৬ উইকেট, তার ৮ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারের সেরা।
অথচ এই টেস্ট তার খেলা হতো না, যদি মেহেদী হাসান মিরাজ ফিট থাকতেন। হয়তো স্কোয়াডেই থাকতেন না! গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দুই টেস্টেই বাজে বোলিংয়ের পর জায়গা হারান দলে। বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হারান আরও আগে। জায়গা পাননি এ বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও। অথচ তাকে গড়ে তোলা হচ্ছিল টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবেই।
মাত্র চারটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পরই ডাক পান টেস্ট দলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার রেকর্ড এখনও পর্যন্ত চোখধাঁধানো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা বলতে সবই টেস্ট ক্রিকেটে। পারফরম্যান্স ভালো না হলে দল থেকে বাদ দেওয়াই যায়। কিন্তু এত দ্রুত চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া মানে তো আস্থার হাত সরিয়ে নেওয়া!
আস্থার সেই সংকটের সঙ্গে যোগ হয় চোটাঘাত। নাঈম তাই দূরে সরে পড়েন টেস্ট দল থেকে। স্কোয়াডে অবশ্য আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন, কিন্তু খেলার সুযোগ হয়নি। গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর স্কোয়াডেও আর ঠাঁই হয়নি।
এই সময়টায় মিরাজ বোলিংয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দারুণ করতে থাকেন। তাতে আরেক অফ স্পিনার নাঈমের ফেরা হয়ে ওঠে আরও কঠিন। শেষ পর্যন্ত সেই মিরাজের আঙুলের চোটই খুলে দিল দুয়ার। প্রথম সুযোগেই নাঈম জানিয়ে দিলেন, জায়গার লড়াই এবার জমে উঠবে তুমুল!
লম্বা সময় সুযোগ না পাওয়া নিয়ে তার মনে যা-ই থাকুক, মুখে অন্তত প্রকাশ নেই। মিরাজকেও তিনি প্রাপ্য কৃতিত্ব দিলেন চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে।
“আসলে সুযোগ দেওয়াটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। সুযোগ পেলে খেলাটা আমার দায়িত্ব। যদি আমাকে খেলায়, চেষ্টা থাকে শতভাগ ঢেলে দেওয়ার, ভালো খেলার। টিম ম্যানেজমেন্ট খেলাবে নাকি খেলাবে না, এটা তো উনাদের সিদ্ধান্ত।”
“ইনজুরির সময়টায় নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। তখন দলের সঙ্গে ছিলাম আমি, খেলার সুযোগ হয়নি। মিরাজ ভাই খুব ভালো খেলছিল, যেটা সত্যি কথা। ব্যাটিং, বোলিং ভালো করছিলেন, ওই জন্যই তো সুযোগ পাইনি। ইনজুরির সময় আমার চেষ্টা ছিল নিজেকে ধরে রাখার, অনুশীলন করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা, যেন যখন সুযোগ আসে তখন ভালো খেলতে পারি।”
গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বগুড়ায় বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে নিজেকে শানিত করার একটা সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। এবার টেস্ট দলে আলো ছড়ানোর পেছনে সেই ক্যাম্পের ভূমিকা দেখছেন নাঈম। কৃতিত্ব দিলেন তিনি জাতীয় দলের স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ ও ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচ সোহেল ইসলামকেও।
“আসলে হেরাথ তো লাইন-লেংথের ব্যাপারে বলেছিলেন, কীভাবে উন্নতি করা যায়। আমরা তো বাংলা টাইগার্স ক্যাম্পে ছিলাম। তখন সোহেল স্যার ছিলেন, উনার সঙ্গে কাজ করেছি, কী কী উন্নতি দরকার উনি বলছিলেন। উনার সঙ্গে কাজ করে ওটা উন্নতির চেষ্টা করেছি। এখানে আসার পর একই কথা। ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছিলেন, কী করতে হবে কোন পরিস্থিতিতে।”
টেস্টের প্রথম দিন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারকে ফেরান তিনি দারুণ দুটি ডেলিভারিতে। তবে এরপর অতি রোমাঞ্চেই কিনা, আলগা বল করে ফেলেন অনেক। তাই রান হজম করেন প্রচুর। দিন শেষে স্পিন কোচ হেরাথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নাঈমকে পরিস্থিতি বুঝে বল করা শিখতে হবে।
পরদিনই সেখানে উন্নতির ছাপ রাখেন ২২ বছর বয়সী এই স্পিনার। পরে বললেন, স্পিন কোচ হেরাথ ও সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
“গতকাল আমি ওরকম ভালো বল করতে পারিনি, যেটা সত্যি কথা। মানে একটা জায়গায় রান আটকে রাখার মতো করতে পারিনি। গতকাল সাকিব ভাই, তাইজুল ভাইরা রান আটকে রাখছে। পরে সাকিব ভাই, কোচ ও সৌরভ ভাইদের (অধিনায়ক মুমিনুল) সঙ্গে কথা বলেছি, উইকেটের চাহিদা অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছি।”
“উইকেট আসলে খুব ভালো (ব্যাটিংয়ের জন্য)। ওখানে রান ছাড়া বল করার পরিকল্পনা ছিল, ভালো জায়গায় বল রাখা। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার, উনি বলেছিলেন এটাই।”
অভিষেক টেস্টে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬১ রানে নিয়েছিলেন তিনি ৫ উইকেট। ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ৯ উইকেট নেওয়ার পথে দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৮২ রানে ৫ উইকেট। এবার উইকেট যেমন একটি বেশি, তেমনি ওজন ও গুরুত্বেও এই পারফরম্যান্সকে এগিয়ে রাখছেন নাঈম।
“এটা এগিয়ে রাখা বলতে… সব পাঁচ উইকেটই তো অন্যরকম। তবে এটা খুব ভালো (ব্যাটিং) উইকেটে পাঁচ উইকেট পেয়েছি, এজন্য একটু এগিয়ে রাখব।”