ক্যাটাগরি

অবৈধদের শিক্ষা দিতে গ্যাস বন্ধ ঢাকার এক এলাকায়

ওই এলাকায় বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় এবং বৈধদেরও বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা সমাধানের পথ বের করতে পারলে বৈধ সংযোগে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিতাস কর্মকর্তারা।

কামরাঙ্গীরচর এলাকায় লাখো মানুষের বাস। গত ১০ মে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সেখানে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কামরাঙ্গীরচর বিতরণ লাইনের অন্তর্ভুক্ত সব এলাকাতেই গ্যাস সংযোগ এখন বিচ্ছিন্ন।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ওই বিতরণ লাইনের মধ্যে থাকা হাজারীবাগ মডেল টাউন এলাকার গৃহিনী আলেয়া সুলতানা জানান, গত ছয় দিন ধরে তিনি রান্না করছেন সিলিন্ডারের গ্যাসে অথবা কেরোসিন স্টোভে।

অথচ তার বাসায় তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে। আছে দুই চুলার বার্নার। তবে তাতে নেই গ্যাস।

আলেয়া বলেন, “গত ১০ মে একবার গ্যাস চলে গিয়েছিল। পরে একবার এসেছিল। পরদিন থেকে আর পাচ্ছি না।

“প্রথম দিন বাইরে থেকে খাবার এনে বাসার সবাই খেয়েছি। কিন্তু এরপরও যখন গ্যাস আসেনি, তখন প্রথমে কেরোসিনের স্টোভে, পরে সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ করছি।”

এ কারণে রান্নার খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

ওই এলাকার আল-আমিন হোটেলে গত ছয় দিন ধরে রান্না হচ্ছে সিলিন্ডারের গ্যাসে, সেই কারণে খাবারের দামও বেড়েছে।

গাবতলী-সদরঘাট এলাকার অটোরিকশাচালক মো. আতাহার বলেন, “আগে ছোটখাটো হোটেল থেকে দুপুরে এক পিস রুই মাছ খাইতাম ৬০ টাকায়। এখন ৮০ টাকা। বলে গ্যাস নেই, খরচ বাড়ছে।”

আল-আমিন হোটেলের কর্মচারী রাশেদ মিয়া বলেন, “সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে। খরচ তো বাড়ছেই। এমনিতেই জিনিসের দাম বেশি, তার মধ্যে গ্যাস নাই।”

কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে নিজের বাসায় রান্নার দুর্ভোগের কথা জানান আব্দুল হালিম।

“লাকড়ি দিয়ে পরিবারের ছয় সদস্যের প্রতিদিন দুই বেলা রান্না করা খুব কষ্টকর। আবার বাজারে লাকড়িও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমাদের তো লাকড়িতে রান্নার অভ্যাস নেই। খুব সমস্যা হচ্ছে।”

তিতাস গ্যাসের ওই জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় বৈধ গ্রাহক ১২ হাজার। অথচ সংযোগ নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি জন।

অর্থাৎ প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক অবৈধভাবে সংযোগ নিয়েছে। এছাড়া বৈধ গ্রাহকদের কাছেও বড় অঙ্কের বিল বকেয়া।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদিউর রহমান বলেন, “আমি ভাড়া থাকি। আমি তো প্রতি মাসে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের বিল দিচ্ছি। আমার তো জানার কথা নয়, সংযোগ অবৈধ? নাকি বিল বকেয়া আছে? আমি তো ভোগান্তিতে আছি।”

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ দাবি করেন, ওই এলাকায় গ্রাহকদের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৮৩ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, “ওই এলাকায় প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে। আবাসিক থেকে শুরু করে চানাচুর, আইসক্রিম তৈরির প্রতিষ্ঠানও অবৈধ সংযোগ নিচ্ছে। বৈধ গ্রাহক ১২ হাজার হলেও সেখানে এক লাখ অবৈধ গ্রাহক। অবৈধ গ্রাহকদের জন্য বৈধদের গ্যাস পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “সেখানকার গ্রাহকরা অনেক বছর ধরে বিল দেন না। অনেক গ্রাহকের কাছে নয় লাখ, আট লাখ, সাত লাখ টাকার বিল বকেয়া। বৈধ সংযোগধারী অনেকের কাছেও বিল বকেয়া। এজন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেশি খুশি হন। সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারাই আবার প্রশাসনের সহযোগিতায় নতুন গ্যাস সংযোগ দিয়ে যান।”

এলাকাবাসীর সঙ্কটের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “আমার এলাকার কাউন্সিলররা বিষয়টা দেখছেন। তারা তিতাসের সঙ্গে মিটিং করবেন শিগগিরই। আমিও এমডির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যুক্তিও ঠিক আছে। বিল বকেয়া, সংযোগ অবৈধ। এভাবে তো চলতে পারে না। একটা সুরাহা করতে হবে।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিজেও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছি। আজকে তিতাসের এমডির সঙ্গে একটা মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। দেখি কী করা যায়।”

এনিয়ে তিতাসেরেএমডি হারুন বলেন, “এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যোগাযোগ করেছিলেন। তাদের সমাধানের পথ বের করলে বৈধ সংযোগধারীদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”