সোমবার ভোরে বৈশাখী পূর্ণিমার জোয়ারের সময়ে হালদায় ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। তবে সে সময় পাহাড়ি ঢল বা বৃষ্টি ছিল না।
এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সেই ডিম জাল দিয়ে নদী থেকে সংগ্রহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে সেই ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয়।
এবার পূর্ণিমার তিথি শুরু হয়েছিল রোববার বেলা ১২টা ২১ মিনিটে। হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা রোববার রাত থেকেই নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
কিন্তু ভোরে মা মাছ খুবই অল্প পরিমাণে ডিম ছেড়েছে জানিয়ে চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিম সংগ্রহকারীরা সবাই নদীতে অপেক্ষা করছেন। পরবর্তী জোয়ারের সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন তারা।”
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মদুনাঘাট থেকে রামদাস মুন্সির হাট পর্যন্ত এলাকায় নদীতে খুবই কম পরিমাণে ডিম পাওয়া গেছে। উজানের দিকে তেমন ডিম মিলছে না।
“জোয়ারের সময় মা মাছ ডিম ছেড়েছে বটে, কিন্তু এবার পাহাড়ি ঢল নেই, বৃষ্টিও হয়নি। তাপমাত্রাও বেশি। পরিমাণ সে কারণেই কম। পরের জোয়ারে কতটা পাওয়া যায়, সেজন্যই অপেক্ষা।”
পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টি হলে পানিতে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাতে ডিম আর পেটে রাখতে পারে না মাছ। তখন পানির তাপমাত্রাও কম থাকে। এবার সেই পরিবেশ পুরোপুরি তৈরি হয়নি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল নেই বলে।
হালদা পাড়ের রামদাস মুন্সির হাট এলাকার বর্ষীয়ান ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছিল। খুবই অল্প নমুনা ডিম কেউ কেউ সংগ্রহ করেছিল।
“এরপর কাল (রোববার) রাতে গড়দুয়ারা এলাকায় কিছু ডিম মিলেছে। গতরাতে বৃষ্টি হয়েছে। সকালে বৃষ্টি হয়নি। পাহাড়ি ঢলও নেই। ভোরের দিকে ডিম ছাড়লেও তা খুব কম। এখন পর্যন্ত খু্বই অল্প ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।”
তার লোকজন আটটি নৌকা নিয়ে নদীতে অবস্থান করছেন জানিয়ে কামাল বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকেই নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। পরের জোয়ার হবে সকাল ১০টার দিকে শুরু হবে। সেসময় মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।”
হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই নিষিক্ত ডিম মেলে।
ডিম ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তা সংগ্রহ করতে হয়। তাই মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় নদীতে নৌকা নিয়ে অবস্থান নেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
২০২১ সালে ২৭ মে এবং ২০২০ সালে ২২ মে হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ।
পুরনো খবর
ইয়াসের জোয়ারে লবণ বেড়ে হালদায় ডিম সংগ্রহে হতাশা